- এক্সিকিউটিভ সামারি
- ১. ভূমিকা
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
- বাংলাদেশে এআই-এর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও প্রসার
- প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও কাঠামো
- ২. বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বর্তমান অবস্থা ও মূল চালিকাশক্তি
- এআই প্রসারের হার ও প্রাথমিক পর্যায়
- বেসরকারি ও সরকারি খাতে এআই-এর ব্যবহার
- এআই-এর মূল চালিকাশক্তি: মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং
- ৩. এআই-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র ও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগসমূহ
- স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাবিজ্ঞান
- কৃষি ও উৎপাদন শিল্প
- অর্থনীতি ও আর্থিক খাত
- শিক্ষা ও গবেষণা
- জনসেবা ও প্রশাসন
- টেলিযোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তা
- অন্যান্য উদীয়মান ক্ষেত্র
- টেবিল ৩.১: বাংলাদেশে এআই-এর প্রধান প্রয়োগ ক্ষেত্র ও উদাহরণ
- শীর্ষস্থানীয় এআই স্টার্টআপ ও কোম্পানি
- টেবিল ৩.২: বাংলাদেশে নির্বাচিত এআই কোম্পানি ও তাদের পরিষেবা
- উল্লেখযোগ্য গবেষণা কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ
- টেবিল ৩.৩: এআই/ডেটা সায়েন্স প্রোগ্রাম প্রদানকারী প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
- ৪. নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো
- জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল ২০২০
- জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ২০২৪ এর খসড়া: উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু
- মূল বিষয়বস্তু: খসড়া নীতিমালায় যেসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে
- সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার উদ্যোগ
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব
- ৫. চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি
- অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: জিপিইউ ও ডেটার অভাব
- দক্ষ মানবসম্পদের অভাব
- নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ: পক্ষপাত, গোপনীয়তা ও নজরদারি
- টেবিল ৫.১: এআই বাস্তবায়নে প্রধান নৈতিক ও আইনি উদ্বেগসমূহ
- কর্মসংস্থানে প্রভাব ও বেকারত্বের শঙ্কা
- ভুয়া তথ্য ও ডিপফেকসের ঝুঁকি
- সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ও জবাবদিহিতা
- বিদেশী কোম্পানি দ্বারা ডেটা ব্যবহারের উদ্বেগ
- স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এআই-এর ভূমিকা
- নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
- গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
- নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর সংস্কার ও বাস্তবায়ন
- ৬. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সুপারিশমালা
- উপসংহার
- রেফারেন্স
- ভুল তথ্য?
এক্সিকিউটিভ সামারি
একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনছে, যা যন্ত্রকে মানুষের মতো চিন্তা করতে, শিখতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে তুলছে। এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশও এআই-এর ক্রমবর্ধমান প্রসারের সাক্ষী হচ্ছে, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগও এই আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করছে। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে এআই-এর বর্তমান অবস্থা, এর মূল চালিকাশক্তি, বিভিন্ন খাতে এর প্রয়োগ, বিদ্যমান নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো, এবং এর প্রসারের সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছে। এটি এআই-এর অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ অর্জনের পথে দেশের অগ্রগতি এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এআই-এর ব্যবহার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, অর্থনীতি, শিক্ষা, জনসেবা এবং টেলিযোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এর প্রয়োগ বাড়ছে। বিশেষ করে, রোগ নির্ণয়, স্মার্ট ফার্মিং, আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষায় এআই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সরকার ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা ২০২৪’ এর খসড়া প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সুসংহত আইনি ও নীতিগত কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা এআই-এর উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সাধনে সহায়তা করবে।
তবে, এআই-এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরি। গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) এবং মানসম্মত ডেটার অভাব, দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি, এবং অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত, ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা, নজরদারি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, এবং ভুয়া তথ্যের মতো নৈতিক ও আইনি উদ্বেগগুলো এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া, সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোর দ্বারা ডেটা ব্যবহারের ঝুঁকিও বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
প্রতিবেদনটি সুপারিশ করে যে, এআই-এর নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া, শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা আইন, জিপিইউ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া উচিত। এআইকে গার্মেন্টস খাতের চেয়েও বড় রপ্তানি খাতে পরিণত করার যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে, সঠিক কৌশল ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এআই বিপ্লবের সুফল গ্রহণ করে একটি স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
১. ভূমিকা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনছে, যা যন্ত্রকে মানুষের মতো চিন্তা করতে, শিখতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে তুলছে 1। এই প্রযুক্তির প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বহুমুখী, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং শিল্প খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে জীবনকে সহজ, দ্রুত এবং দক্ষ করে তুলছে 1। এআই বিপ্লব এমন একটি পর্যায়কে নির্দেশ করে যেখানে এআই প্রযুক্তি শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং দ্রুতগতিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং শিল্প খাতে প্রবেশ করে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করছে 1। এআই সিস্টেমগুলো ডেটা থেকে প্যাটার্ন শনাক্ত করতে, অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে, যুক্তি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করতে, জটিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে এবং ছবি, ভিডিও বা শব্দ থেকে তথ্য গ্রহণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে সক্ষম 1।
এআই-এর এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, যা দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ব্যাপক গ্রহণ দ্বারা চিহ্নিত, বাংলাদেশের নিজস্ব এআই যাত্রার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী এআই-এর রূপান্তরমূলক ক্ষমতা স্বীকৃত হওয়ায়, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এর সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলো মূল্যায়ন করা অত্যাবশ্যক। বৈশ্বিক প্রবণতাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এআই কেবল একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং এটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতীয় প্রতিযোগিতার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের জন্য এআই-এর সাথে কৌশলগতভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার জন্যও অপরিহার্য।
বাংলাদেশে এআই-এর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও প্রসার
বৈশ্বিক প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রসার বাড়ছে 2। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দেশে শুরু হয়েছে, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন 2। বেসরকারি খাতে এর ব্যবহার বেশি হলেও, সরকারি খাতও এই আধুনিক প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে নেই 2। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ সবার কাছেই একটি পরিচিত বিষয় হয়ে উঠেছে 3।
বাংলাদেশে এআই-এর ক্রমবর্ধমান গ্রহণ, যা তরুণ উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতের দ্বারা চালিত হচ্ছে, একটি উদীয়মান এআই ইকোসিস্টেমের ইঙ্গিত দেয়, যদিও এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান আগ্রহ একটি গতিশীল পরিবেশের জন্ম দিয়েছে, যেখানে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে, এই প্রাথমিক পর্যায়টি আরও ব্যাপক বৃদ্ধি এবং কৌশলগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাও নির্দেশ করে, বিশেষ করে অবকাঠামো এবং দক্ষ জনবলের মতো মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায়। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য এআই-এর সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে, যা দেশের ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও কাঠামো
এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আশাব্যঞ্জক বিস্তার সম্পর্কে একটি গভীর এবং বিশেষজ্ঞ-স্তরের বিশ্লেষণ প্রদান করা। এটি দেশের বর্তমান এআই পরিস্থিতি, এর মূল প্রয়োগ ক্ষেত্রসমূহ, নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
প্রতিবেদনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী নেতা এবং শিক্ষাবিদদের জন্য কার্যকর তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যা দেশে টেকসই ও নৈতিক এআই উন্নয়নের জন্য অবহিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। প্রতিবেদনটি একটি সুসংগঠিত কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে প্রতিটি অংশ এআই-এর প্রসারের বিভিন্ন দিককে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে, যাতে পাঠক একটি সামগ্রিক চিত্র পেতে পারেন।
২. বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বর্তমান অবস্থা ও মূল চালিকাশক্তি
এআই প্রসারের হার ও প্রাথমিক পর্যায়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হলেও, বাংলাদেশে প্রযুক্তির এই সর্বশেষ সংস্করণের ব্যবহার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন 2। এই প্রাথমিক পর্যায় সত্ত্বেও, দেশে এআই গ্রহণের একটি স্পষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বিশেষত বেসরকারি খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের দ্বারা চালিত হচ্ছে। সরকারি খাতও এই আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং এর ব্যবহারে এগিয়ে আসছে 2।
বাংলাদেশে এআই-এর এই প্রাথমিক অবস্থা, ক্রমবর্ধমান আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, বৈশ্বিক অগ্রদূতদের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিপক্কতার ব্যবধান নির্দেশ করে। এর মানে হলো, বাংলাদেশ এখনও এআই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। এই ব্যবধানটি দ্রুত উন্নয়ন এবং লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যাতে বাংলাদেশ কেবল এআই-এর ব্যবহারকারী না হয়ে এর উদ্ভাবক ও নির্মাতা হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই পর্যায়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ব্যবধান কমানো সম্ভব, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে সহায়ক হবে।
বেসরকারি ও সরকারি খাতে এআই-এর ব্যবহার
বাংলাদেশে এআই গ্রহণে বেসরকারি খাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা এই প্রযুক্তির প্রসারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন 2। উদাহরণস্বরূপ, ‘ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড’ এর মতো কোম্পানিগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে এআই সেবা প্রদান করছে, যা হাজার হাজার পৃষ্ঠার কর্পোরেট ডেটা বিশ্লেষণে মানুষের জন্য সময়সাপেক্ষ কাজকে দ্রুত ও নির্ভুল করে তুলছে 2। উৎপাদন খাতেও ‘বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস লিমিটেড’ এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এআই এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ব্যবহার করে অপচয় কমাতে, মেশিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে, ব্যয় কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব হতে সহায়তা করছে 2। এছাড়া, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১৮ সালে তাদের মার্কেটিং সিস্টেমকে এআই দিয়ে উন্নত করেছে, যার ফলে কম জনবল দিয়েও মার্কেটিংকে আরও কার্যকর ও দক্ষ করা সম্ভব হয়েছে এবং সিস্টেম-লসও কমেছে 2।
অন্যদিকে, সরকারি খাতও আধুনিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্রিয়ভাবে জড়িত হচ্ছে 2। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ দেশীয় ওয়েবসাইটগুলোর সার্চ ইঞ্জিনকে আরও স্মার্ট করতে এআই ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে 5। এছাড়া, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নে এআই-এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে এআইকে সরকারি সেবা, শাসনব্যবস্থা এবং নাগরিক জীবনে আধুনিকীকরণের মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখা হচ্ছে 3।
বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা চালিত গতিশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা এআই-এর দ্রুত গ্রহণকে উৎসাহিত করছে, যা বাজারের চাহিদা পূরণে দ্রুত সাড়া দিচ্ছে। অপরদিকে, সরকারি খাতের সম্পৃক্ততা এআই-এর জাতীয় কৌশলগত গুরুত্ব এবং বৃহৎ পরিসরে অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। এই দুই খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এআই-এর টেকসই বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং সরকারি খাতের নীতিগত ও অবকাঠামোগত সমর্থন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ এআই-এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।
এআই-এর মূল চালিকাশক্তি: মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মূল চালিকাশক্তি হিসেবে মেশিন লার্নিং (এমএল), ডিপ লার্নিং (ডিএল) এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত 1। এই প্রযুক্তিগুলো যন্ত্রকে ডেটা থেকে শিখতে, প্যাটার্ন শনাক্ত করতে, সমস্যা সমাধান করতে এবং মানুষের ভাষা বুঝতে সক্ষম করে তোলে। এআই-এর বিবর্তন, যা ১৯৫১ সালে চেকার্স প্রোগ্রাম থেকে শুরু হয়ে আইবিএম-এর ডিপ ব্লু (১৯৯৭) এবং ওয়াটসন (২০১১) পর্যন্ত এগিয়েছে, এবং সাম্প্রতিককালে ওপেনএআই-এর জিপিটি সিরিজ (চ্যাটজিপিটি, জিপিটি-৪ও) এবং গুগলের জেমিনি, অ্যানথ্রোপিকের ক্লদ, ডিপসিকের আর১/ভি৩ মডেলের মতো জেনারেটিভ এআই মডেলগুলোর দ্রুত প্রসার, এমএল, ডিএল এবং এনএলপি-এর নিরন্তর উন্নতির ফল 1।
বৈশ্বিকভাবে এআই-এর এই মৌলিক চালিকাশক্তিগুলোর উপর নির্ভরতা ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের এআই উন্নয়ন মূলত এই মূল ক্ষেত্রগুলোতে মৌলিক গবেষণার পরিবর্তে প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগ এবং অভিযোজনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশের এআই-এর অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী এআই-এর অগ্রগতি এবং এর সহজলভ্যতার দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা তৈরি করে: বাংলাদেশ কি বিদ্যমান বৈশ্বিক এআই প্রযুক্তিগুলোকে শক্তিশালীভাবে গ্রহণ ও উদ্ভাবন করবে, নাকি মৌলিক এআই গবেষণায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করে বিশ্বব্যাপী অবদানকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে? বর্তমান প্রবণতা প্রথমটির দিকেই ইঙ্গিত করে, যার ফলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে।
৩. এআই-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র ও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগসমূহ
স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাবিজ্ঞান
স্বাস্থ্যসেবা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা রোগ নির্ণয়, ওষুধ আবিষ্কার, জরুরি পরামর্শ এবং চিকিৎসা পরিকল্পনায় সহায়তা করছে 1। এআই এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং প্যাথলজি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য জটিল রোগ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে 1। এটি নতুন ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সঠিক রোগীদের নির্বাচন করতে সাহায্য করে 1। এছাড়া, রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউলিং, নার্সিং স্টাফ বরাদ্দ এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনার উন্নতিতেও এআই ব্যবহৃত হচ্ছে 1।
এআই-চালিত ফিটনেস ব্যান্ড এবং মেডিকেল হিস্টরি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাক্তারের কাছে না গিয়েও রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত ওষুধের পরামর্শ দেওয়া সম্ভব, যা সেল ফোনের মাধ্যমে সহজেই অর্ডার করা যায় 1। টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম এবং স্মার্ট ডিভাইস যেমন স্মার্টওয়াচ বা হেলথ ব্যান্ড প্রবীণদের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করে সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করে, এমনকি ওষুধের সময় মনে করিয়ে দেয় 8। এআই-চালিত সেন্সর প্রবীণদের পড়ে যাওয়া শনাক্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবায় যোগাযোগ করতে পারে 8। মাইক্রোসফট সম্প্রতি এমন একটি এআই সিস্টেমের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে যা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্তকরণে মানব চিকিৎসকদের চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’-এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় 10।
বাংলাদেশের মতো সম্পদ-সীমাবদ্ধ পরিবেশে, স্বাস্থ্যসেবায় এআই-এর প্রয়োগ মৌলিক সহায়তা ছাড়িয়ে আরও পরিশীলিত রোগ নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণ সরঞ্জামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি জনস্বাস্থ্য ফলাফলে উল্লেখযোগ্য উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি করে। বিশেষায়িত চিকিৎসা পেশাদারদের সীমিত প্রবেশাধিকারের প্রেক্ষাপটে, এআই স্বাস্থ্যসেবাকে গণতান্ত্রিক করতে পারে, রোগ নির্ণয় সহায়তা, দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ এবং ব্যক্তিগতকৃত পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার উন্নত করতে পারে এবং বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর উপর চাপ কমাতে পারে। স্বাস্থ্যসেবায় এআই-তে কৌশলগত বিনিয়োগ একটি উল্লম্ফন প্রভাব তৈরি করতে পারে, যা বাংলাদেশকে তার স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জগুলো আরও দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করতে এবং অনুন্নত জনগোষ্ঠীতে পৌঁছাতে সক্ষম করবে।
কৃষি ও উৎপাদন শিল্প
কৃষি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) স্মার্ট ফার্মিং কৌশলগুলির মাধ্যমে কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মাটির অবস্থা বিশ্লেষণ, ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা পরিচালনা 1। এআই-চালিত ড্রোন এবং স্যাটেলাইট চিত্রগুলি ফসলের রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয় 1। ‘মদিনা টেক লিমিটেড’ কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘ডা. চাষী’ মোবাইল অ্যাপ কৃষকদের ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তুলে রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে সাহায্য করে 11। এআই অ্যালগরিদম মাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত সারের সুপারিশ করতে পারে, যা সারের অপচয় এবং পরিবেশগত প্রভাব কমাতে সহায়ক 11। রিয়েল-টাইম আবহাওয়ার তথ্য এবং মাটির আর্দ্রতার স্তর ব্যবহার করে এআই কার্যকর সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে 11। এআই মডেল ঐতিহাসিক ডেটা এবং বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে ফসলের ফলনের পূর্বাভাস প্রদান করতে পারে 11। গবাদিপশু পালনেও এআই ব্যবহৃত হচ্ছে; ‘ক্যাটেলআই’ এর মতো কোম্পানিগুলো এআই এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে পশুর স্বাস্থ্য ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে 12। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সৌর পাম্পে মেশিন লার্নিং ডিভাইস বসিয়ে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং সঠিক সময়ে জলসেচের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করছে 2।
উৎপাদন শিল্প: শিল্প কারখানাগুলোতেও এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে, যা পণ্যের মান বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক 1। বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস লিমিটেড এআই এবং আইওটি ব্যবহার করে তাদের উৎপাদন খাতের ক্লায়েন্টদের অপচয় কমাতে, মেশিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে, ব্যয় কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব হতে সহায়তা করছে 2।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি খাতে এআই-এর উপর মনোযোগ খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ জীবিকা উন্নত করার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধার কৌশলগত উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করে। এটি ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতিকে ডেটা-চালিত স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা রাখে। এআই-এর সম্পদ ব্যবহার অপ্টিমাইজ করার, ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার এবং সমস্যাগুলি দ্রুত শনাক্ত করার ক্ষমতা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে, ক্ষতি কমাতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে পারে। এটি কেবল দক্ষতার উন্নতি নয়, বরং কৃষি অনুশীলনে একটি মৌলিক পরিবর্তন, যা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং গ্রামীণ এলাকায় নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই ক্ষেত্রে সফল এআই একীকরণ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য একটি মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে এবং জাতীয় জিডিপি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
অর্থনীতি ও আর্থিক খাত
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং বীমা খাতে কার্যক্রম, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, গ্রাহকসেবা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও কার্যকর ও দক্ষ করে তুলছে 14। এআই অ্যালগরিদম ইক্যুইটি তহবিল ব্যবস্থাপনায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জালিয়াতি শনাক্তকরণে, শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় লেনদেনে, আর্থিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ক্রেডিট যোগ্যতা নির্ধারণে এবং চ্যাটবট ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও সহায়তা প্রদানে ব্যবহৃত হচ্ছে 1।
‘ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড’ এর সিইও মো. অলি আহাদ জানিয়েছেন যে, তারা কয়েকটি ব্যাংককে এআই সার্ভিস দিচ্ছেন, যা গ্রাহকের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে, যা হাজার হাজার পৃষ্ঠার কর্পোরেট ডেটা বিশ্লেষণে মানুষের জন্য অনেক সময়সাপেক্ষ 2। তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে চারটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে 2। এছাড়া, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১৮ সালে তাদের মার্কেটিং সিস্টেমকে এআই দিয়ে উন্নত করেছে, যার ফলে কম জনবল দিয়ে মার্কেটিংকে আরও কার্যকর ও দক্ষ করা সম্ভব হয়েছে এবং সিস্টেম-লসও কমেছে 2।
আর্থিক খাতে এআই গ্রহণ, বিশেষ করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং জালিয়াতি শনাক্তকরণের জন্য, বৃহত্তর আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার দিকে একটি পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা অপরিহার্য। এআই-এর বিশাল ডেটা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা জালিয়াতি শনাক্তকরণ এবং ঝুঁকি মূল্যায়নে আর্থিক সিস্টেমের অখণ্ডতা এবং দক্ষতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। এটি বিশ্বাস তৈরি করে, ক্ষতি হ্রাস করে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। আর্থিক খাতে এআই-এর সক্রিয় গ্রহণ বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও প্রতিযোগিতামূলক, সুরক্ষিত এবং স্থিতিস্থাপক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে, সম্ভাব্যভাবে আর্থিক অপরাধ হ্রাস করতে এবং পরিষেবা বিতরণে উন্নতি সাধন করতে পারে।
শিক্ষা ও গবেষণা
শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কাস্টমাইজড লার্নিং পদ্ধতি, ভার্চুয়াল টিউটর এবং শিক্ষার্থীদের কাজের স্বয়ংক্রিয় মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করছে 1। খান একাডেমি, কোর্সেরা এবং ডুওলিঙ্গোর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ডেটা-চালিত তথ্য সরবরাহ করে 18। এআই-চালিত ভাষা সফটওয়্যার শিক্ষার্থীদের লেখার দক্ষতা, ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার এবং সামগ্রিক যোগাযোগ উন্নত করতে সহায়তা করে 18। ভার্চুয়াল স্টাডি অ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষার্থীদের সময়সূচি তৈরি, পরিকল্পনা, পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং অনুপ্রেরণা প্রদানে সাহায্য করে 18।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এআই গবেষণা ও শিক্ষায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন এআই নিয়ে কাজ করছেন এবং গবেষণার জন্য ‘অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্স মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস ল্যাব (এইমস ল্যাব)’ এবং ‘ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন (আইআরআইআইসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছেন 19। তারা এআই-এর মাধ্যমে শিক্ষা খাতের সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন, যেমন গণিত বা কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের ভয় দূর করা এবং তাদের সঠিক বিষয় ও কর্মজীবনের পথ বেছে নিতে সহায়তা করা 19। ইউআইইউ শুধু তাদের শিক্ষার্থীদেরই নয়, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাময় এআই-সংক্রান্ত ধারণাকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে 19।
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দেশে প্রথমবারের মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্সে স্নাতক কোর্স চালু করেছে, যার লক্ষ্য বিশ্বমানের দক্ষ পেশাদার তৈরি করা এবং শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে দূরত্ব কমানো 20। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ ‘শেপিং দ্য ফিউচার উইথ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই): স্কোপ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করে এআই গবেষণা ও শিক্ষা বিকাশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে 22।
শিক্ষায় এআই-এর সক্রিয় একীকরণ, ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রাম পর্যন্ত, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এটি ভবিষ্যতের কর্মশক্তির জন্য এআইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং দেশীয় এআই উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, যা প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদী আত্মনির্ভরশীলতার জন্য অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মানব পুঁজি বিকাশে এবং মৌলিক গবেষণা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই কৌশলগত বোঝাপড়াকে তুলে ধরে যে, এআই গ্রহণ এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী অপরিহার্য। এই পদক্ষেপটি এআই প্রতিভার একটি টেকসই সরবরাহ তৈরি করতে এবং দেশের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়নের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বিদেশী দক্ষতার উপর নির্ভরতা হ্রাস করে। এই একাডেমিক চাপ, যদি পর্যাপ্তভাবে সমর্থিত হয়, তবে বাংলাদেশকে কেবল এআই ভোক্তা থেকে একটি বিকাশকারী এবং উদ্ভাবকে রূপান্তরিত করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে এআইকে অধ্যাপক মামুনের 19 কল্পনা অনুযায়ী একটি প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত করতে পারে।
জনসেবা ও প্রশাসন
জনসেবা খাতে এআই-এর একীকরণ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে 3। এর প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা, ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম, অনলাইন প্রশিক্ষণ, দূরশিক্ষণ কার্যক্রম, মহামারী আক্রান্ত এলাকা নির্ধারণ, এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তির তালিকা তৈরি 4। সম্প্রতি, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতিতেও এআই ব্যবহার শুরু হয়েছে 20।
‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা ২০২৪’ এর খসড়ায় স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস, শাসনব্যবস্থা এবং বিচারিক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এআই প্রযুক্তি আইনি প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে, যা মামলা প্রক্রিয়াকরণ, ট্র্যাকিং, সময়সূচি, আইনি গবেষণা, নথি বিশ্লেষণ, মামলার পূর্বাভাসসহ আদালত পরিচালনায় সহায়তা করবে 3।
সরকারের জনসেবায় এআই-এর উপর জোর দেওয়া ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে, যার লক্ষ্য শাসনব্যবস্থার দক্ষতা এবং নাগরিক পরিষেবা বিতরণ উন্নত করা। তবে, এটি ডেটা গোপনীয়তা এবং নজরদারির সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করে। এআই, যদিও পরিষেবাগুলিকে সুগম করতে, দুর্নীতি কমাতে এবং দক্ষতা বাড়াতে পারে, ডেটা গভর্ন্যান্স এবং নজরদারির মতো ক্ষেত্রগুলিতে এর প্রয়োগ 25 গোপনীয়তা এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে। ‘স্মার্ট শাসনব্যবস্থা’র আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই শক্তিশালী নৈতিক সুরক্ষাগুলির সাথে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। জনসেবায় এআই-এর সাফল্য স্বচ্ছ বাস্তবায়ন, শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা আইন এবং জনসাধারণের তদারকির প্রক্রিয়াগুলির উপর নির্ভর করে, যাতে নাগরিক অধিকার এবং বিশ্বাস ক্ষুণ্ন না হয়।
টেলিযোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তা
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ এবং মোবাইল ফোন অপারেটররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সফলভাবে ব্যবহার করছে 2। ই-কমার্স, টেলিমেডিসিন, ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি এবং ৫জি নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। এআই এই অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে 4।
সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এআই এবং মেশিন লার্নিং ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে সাইবার হামলার প্যাটার্ন শনাক্তকরণ এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা তৈরি অন্তর্ভুক্ত 1। তবে, সাইবার নিরাপত্তায় এআই একটি ‘দ্বি-ধারী তলোয়ার’ হিসেবেও কাজ করে, কারণ এটি হ্যাকিং, স্প্যামিং, মিথ্যা তথ্য বা ভিডিও (ডিপফেক) তৈরি এবং এআই-চালিত সাইবার হামলার মতো অপরাধমূলক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হতে পারে 7।
সাইবার নিরাপত্তায় এআই-এর দ্বৈত প্রকৃতি – একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং একটি সম্ভাব্য অস্ত্র উভয়ই – একটি জটিল এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অস্ত্র প্রতিযোগিতা তৈরি করে, যার জন্য জাতীয় ডিজিটাল অবকাঠামো এবং নাগরিক ডেটা সুরক্ষার জন্য নিরন্তর অভিযোজন এবং শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রয়োজন। বাংলাদেশ যখন ডিজিটালাইজেশন এবং এআই গ্রহণ করে, তখন এটি অত্যাধুনিক সাইবার হুমকির প্রতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এআই-এর প্রতিরক্ষামূলক ব্যবহার অপরিহার্য, কিন্তু এআই-এর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা মানে সাইবার নিরাপত্তা একটি স্থিতিশীল চ্যালেঞ্জ নয়, বরং একটি গতিশীল, বিবর্তনশীল অস্ত্র প্রতিযোগিতা। এর জন্য উন্নত এআই-চালিত প্রতিরক্ষায় ক্রমাগত বিনিয়োগ এবং এআই-এর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সক্রিয় আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্রমবর্ধমানভাবে এই দ্বৈত-ব্যবহার প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনার ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, যার জন্য প্রতিরক্ষা এবং এর ক্ষতিকারক অ্যাপ্লিকেশনগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এআই-কে একীভূত করে একটি ব্যাপক সাইবার নিরাপত্তা কৌশল প্রয়োজন, সম্ভবত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কঠোর অভ্যন্তরীণ আইনের মাধ্যমে।
অন্যান্য উদীয়মান ক্ষেত্র
এআই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন উদীয়মান খাতেও তার প্রভাব বিস্তার করছে:
- মার্কেটিং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১৮ সালে তাদের মার্কেটিং সিস্টেমকে এআই দিয়ে উন্নত করেছে। এর ফলে কম জনবল দিয়েও মার্কেটিংকে আরও কার্যকর ও দক্ষ করা সম্ভব হয়েছে এবং সিস্টেম-লসও কমেছে 2।
- কোয়ালিটি মনিটরিং: ‘অ্যাকুয়ালিংক’-এর সিইও সৈয়দ রিজওয়ান পণ্য যেমন মাটি ও পানির মান নিরীক্ষণে এআই নিয়ে কাজ করছেন। তারা ‘সেন্সোমিটার’ নামে একটি আইওটি ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা দূরবর্তীভাবে একটি কারখানার পরিবেশ, বাতাসের আর্দ্রতা, পানির মান এবং কোল্ড স্টোরেজের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারে 2। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীজের জন্য একটি গ্রিন হাউজ তাদের ডিভাইস দিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হয়, যেখানে তাপমাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় 2।
- সাংবাদিকতা: একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক ব্যক্তিগত কাজের জন্য এআই ব্যবহার করলেও, নিউজরুমের কার্যক্রমে এর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার এখনও খুব কম 26। সমীক্ষায় নিউজরুমের উন্নয়নের জন্য এআই গাইডলাইন প্রণয়ন, স্বচ্ছ এআই ডিসক্লোজার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আয়োজন এবং সাংবাদিকতা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে 26।
- ই-কমার্স: ই-কমার্সের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বাড়াচ্ছে, যেখানে এআই সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অপ্টিমাইজ করতে ভূমিকা রাখতে পারে 4।
বিভিন্ন খাতে, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা থেকে শুরু করে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং এমনকি সাংবাদিকতা পর্যন্ত, এআই-এর বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োগগুলি কেবল ঐতিহ্যবাহী প্রযুক্তি খাতগুলিতেই নয়, বরং সমগ্র অর্থনীতি জুড়ে প্রক্রিয়াগুলিকে অপ্টিমাইজ করতে এবং দক্ষতা বাড়াতে এআই-এর ব্যাপক সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। এই ব্যাপক প্রয়োগের অর্থ হল এআই অর্থনীতির অনেক অংশে উৎপাদনশীলতার উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে, অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্রগুলিতে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং সাধারণ প্রযুক্তি শিল্পের বাইরে নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করতে পারে।
টেবিল ৩.১: বাংলাদেশে এআই-এর প্রধান প্রয়োগ ক্ষেত্র ও উদাহরণ
| ক্ষেত্র (Sector) | এআই প্রয়োগ (AI Application) | উদাহরণ/সুবিধা (Example/Benefit) | প্রাসঙ্গিক স্নিপেট (Relevant Snippets) |
| স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare) | রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা, দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ | এক্স-রে/সিটি স্ক্যান বিশ্লেষণ, ওষুধ আবিষ্কার, টেলিমেডিসিন, স্মার্ট হেলথ ডিভাইস | 1 |
| কৃষি (Agriculture) | স্মার্ট ফার্মিং, রোগ ও পোকা শনাক্তকরণ, সেচ ব্যবস্থাপনা | ‘ডা. চাষী’ মোবাইল অ্যাপ, মাটির স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ, ড্রোন ব্যবহার, ফলন পূর্বাভাস | 1 |
| অর্থনীতি ও ফিন্যান্স (Economy & Finance) | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জালিয়াতি শনাক্তকরণ, স্বয়ংক্রিয় লেনদেন, গ্রাহকসেবা | ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিশ্লেষণ, শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন, চ্যাটবট, বিকাশ মার্কেটিং সিস্টেম | 1 |
| শিক্ষা (Education) | ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা, ভার্চুয়াল টিউটর, গবেষণা সহায়তা | কাস্টমাইজড কোর্সওয়ার্ক, ভাষা সফটওয়্যার, ইউআইইউ ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির এআই প্রোগ্রাম | 1 |
| জনসেবা ও প্রশাসন (Public Services & Admin) | টেলিমেডিসিন, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিচারিক প্রক্রিয়া | কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য পরামর্শ, মহামারী আক্রান্ত এলাকা নির্ধারণ, আইনি প্রক্রিয়া উন্নতকরণ | 1 |
| উৎপাদন শিল্প (Manufacturing) | অপচয় হ্রাস, উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রণ | মেশিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, সেন্সোমিটার দিয়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ | 1 |
| টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) | নেটওয়ার্ক অপ্টিমাইজেশন, ৫জি প্রস্তুতি | মোবাইল অপারেটরদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, ব্যান্ডউইডথ চাহিদা পূরণ | 2 |
| সাইবার নিরাপত্তা (Cybersecurity) | সাইবার হামলা শনাক্তকরণ, স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া | প্যাটার্ন বিশ্লেষণ, উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা | 1 |
| অন্যান্য (Others) | মার্কেটিং, কোয়ালিটি মনিটরিং, সাংবাদিকতা | বিকাশ মার্কেটিং, মাটি/পানির মান নিরীক্ষণ, নিউজরুমে এআই ব্যবহার | 2 |
শীর্ষস্থানীয় এআই স্টার্টআপ ও কোম্পানি
বাংলাদেশে এআই-কেন্দ্রিক কোম্পানি এবং স্টার্টআপের সংখ্যা বাড়ছে। ‘ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড’, যা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, একটি ডিপ-টেক স্টার্টআপ যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বড় ক্লায়েন্ট সংস্থাগুলোকে ব্যবহারিক এআই সমাধান প্রদান করছে। তাদের ৭টি এআই পণ্য বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং উৎপাদন এআই, ভাষা এআই, ট্রেড মার্কেটিং এআই, ফিনটেক সমাধান এবং এন্টারপ্রাইজ অ্যানালিটিক্স কভার করে আরও ১১টি পণ্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে 30। তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে বিকাশ, ইউনিলিভার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, টেলিনর এবং আইডিএলসি অন্তর্ভুক্ত 31।
‘সোশিয়ান লিমিটেড’ একটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) কোম্পানি যা স্পিচ এআই এবং টেক্সট এআই-তে বিশেষজ্ঞ। এটি সংস্থাগুলোকে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে এবং মানব-যন্ত্র যোগাযোগে সেতু বন্ধনে সহায়তা করে 32। তারা ৮১টি ভাষায় নিরাপত্তা বুদ্ধিমত্তা, স্পিচ, ভিজ্যুয়াল, টেক্সচুয়াল এবং সাইবার বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করে 34। ‘স্পিকলার’ বাংলাদেশের প্রথম এআই-চালিত বাংলা কল সেন্টার টেলিফোনি পরিষেবা হিসেবে পরিচিত, যার লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গভীর বোঝাপড়ার মাধ্যমে গ্রাহক সহায়তায় বিপ্লব ঘটানো 32।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এআই কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেটাজো ইনফোটেক, উইজার্ড সফটওয়্যার অ্যান্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ, নুরেন্সি, বয়েস হিরো, টেক্সট লিমিটেড, কোর্সফিকশন, অ্যাবেলিং, ডেভক্সহাব লিমিটেড, ভিভাসফট লিমিটেড, আস্কি সিস্টেম, ইমপ্লেভিস্টা, ডোডিড, ক্র্যামস্ট্যাক, শাওন ওয়েব, ব্র্যাক আইটি, ইনফোলিটক্স, কোয়াডকে টেকনোলজিস লিমিটেড, ফিনটেকহাব লিমিটেড, ইশাতেক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড, সফটস্যাসি, আর্টিক্সকোর, স্ন্যাপটেক লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফরম্যাটিক্স লিমিটেড, নাসেনিয়া, বিজিট, অগনিটিভ, বিজিট গ্রুপ, এরা-ইনফোটেক লিমিটেড, লিড সফট বাংলাদেশ লিমিটেড, লজিকবিটস লিমিটেড, টুইন টেক ল্যাব, সফটোগ্রাফ লিমিটেড, রেস্টপ্লেক্স ডিজিটাল, ফ্রন্টচার টেকনোলজিস লিমিটেড, পিক্সেল ডেভ, ফরওয়ে সার্ভিস, আইএম ডিজিটাল, আইক্সোরা সলিউশন লিমিটেড, ইনোভেটিভ স্টেশন লিমিটেড, সফটিনিয়ার্স, থিমপার্চ লিমিটেড, অনটিক টেকনোলজি, মান্ডেসিস, ভ্যালরওয়াইড লিমিটেড, অবলিভিয়ন সলিউশনস লিমিটেড, টেকাবাইট সলিউশনস, এস টেকনোলজিস, ডাইনামিক সলিউশন ইনোভেটরস লিমিটেড (ডিএসআই) এবং ইনক্রোসফট 32।
বিশেষায়িত এআই কোম্পানিগুলির এই উত্থান (যেমন, এনএলপি, কল সেন্টার এআই, ডিপ-টেক সমাধান) ইঙ্গিত দেয় যে বাজারটি কেবল সাধারণ এআই গ্রহণের পরিবর্তে নির্দিষ্ট শিল্পের চাহিদা দ্বারা চালিত হচ্ছে, যা বৈশ্বিক এআই ল্যান্ডস্কেপের মধ্যে একটি বিশেষ নেতৃত্ব তৈরি করতে পারে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এআই গ্রহণ কেবল একটি ব্যাপক প্রবণতা নয়, বরং এটি নির্দিষ্ট স্থানীয় বাজারের চাহিদা এবং শিল্পের সমস্যাগুলি পূরণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এটি মৌলিক এআই বাস্তবায়নের বাইরে মূল্য সংযোজিত, কাস্টমাইজড সমাধান তৈরির দিকে একটি পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়, যা নির্দিষ্ট ডোমেনগুলিতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করতে পারে। এই বিশেষীকরণ বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট এআই উল্লম্বগুলিতে দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য প্রাসঙ্গিক বিশেষায়িত এআই সমাধানগুলির একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে।
টেবিল ৩.২: বাংলাদেশে নির্বাচিত এআই কোম্পানি ও তাদের পরিষেবা
| কোম্পানি (Company) | প্রতিষ্ঠার বছর (Founded) | প্রধান এআই পরিষেবা (Key AI Services) | উল্লেখযোগ্য প্রকল্প/ক্লায়েন্ট (Notable Projects/Clients) | প্রাসঙ্গিক স্নিপেট (Relevant Snippets) |
| Intelligent Machines Limited | 2018 | ডিপ-টেক এআই সমাধান, উৎপাদন এআই, ভাষা এআই, ট্রেড মার্কেটিং এআই, ফিনটেক সমাধান, এন্টারপ্রাইজ অ্যানালিটিক্স | বিকাশ (৭৪% উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি), টেলিনর মিয়ানমার (৯২.৫% খরচ সাশ্রয়), ইউনিলিভার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আইডিএলসি | 2 |
| Socian Ltd. | 2016 | ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি), স্পিচ এআই, টেক্সট এআই, নিরাপত্তা বুদ্ধিমত্তা | বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান, ৮১টি ভাষায় মানব-যন্ত্র যোগাযোগ | 32 |
| Speaklar | 2018 | এআই-চালিত বাংলা কল সেন্টার টেলিফোনি পরিষেবা | স্বাভাবিক, ব্যক্তিগতকৃত বাংলা কথোপকথনের মাধ্যমে গ্রাহক সহায়তায় বিপ্লব | 32 |
| Medina Tech Limited | N/A | এআই-চালিত কৃষি সমাধান | ‘ডা. চাষী’ মোবাইল অ্যাপ (ফসলের রোগ/পোকা শনাক্তকরণ) | 11 |
| Bondstein Technologies Limited | N/A | উৎপাদনের জন্য এআই ও আইওটি | কারখানায় অপচয় হ্রাস, মেশিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার, খরচ কমানো | 2 |
| Aqualink | N/A | গুণমান পর্যবেক্ষণের জন্য এআই, আইওটি ডিভাইস | ‘সেন্সোমিটার’ (কারখানার পরিবেশ, পানির গুণমান, কোল্ড স্টোরেজ দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ) | 2 |
| Abelling | 2019 | ফলিত এআই, উচ্চ-মানের ডেটা লেবেলিং | এআই-এর প্রয়োগের দিকগুলিতে মনোযোগ, সাশ্রয়ী মূল্য | 32 |
উল্লেখযোগ্য গবেষণা কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ
বাংলাদেশে এআই গবেষণা ও শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) এআই গবেষণার জন্য ‘অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্স মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস ল্যাব (এইমস ল্যাব)’ এবং ‘ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন (আইআরআইআইসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছে 19। এই কেন্দ্রগুলো শিক্ষা খাতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনের পথ বেছে নিতে সহায়তা করার উপর বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে 19। ইউআইইউ শুধু তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদেরই নয়, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাময় এআই-সংক্রান্ত ধারণাকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। বর্তমানে, ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৫টি দল গবেষণার কাজে জড়িত রয়েছে, যাদের অধিকাংশই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী 19।
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দেশে প্রথমবারের মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্সে স্নাতক কোর্স চালু করেছে, এর পাশাপাশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগও চালু করেছে 20। এই উদ্যোগের লক্ষ্য শিল্প খাতের চাহিদা পূরণ করা, বিশ্বমানের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা এবং বাংলাদেশকে এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া 20। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ ‘শেপিং দ্য ফিউচার উইথ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই): স্কোপ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করে এআই গবেষণা ও শিক্ষা বিকাশের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে 22।
এলজি গ্রুপও ভবিষ্যতের প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি নতুন এআই গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছে। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী তিন বছরে ১৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে বিশ্বজুড়ে মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ১,০০০ এআই বিশেষজ্ঞ তৈরি করা 37। এছাড়া, ‘জাতীয় এআই কৌশল ২০২০’ এ একটি জাতীয় এআই গবেষণা কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে আঞ্চলিক গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) সুবিধা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সাথে উদ্ভাবনী বৃত্তি ও ফেলোশিপ কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে 38।
বিশ্ববিদ্যালয়-নেতৃত্বাধীন এআই প্রোগ্রাম এবং গবেষণা ল্যাবগুলোর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যার লক্ষ্য একটি ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত কর্মীবাহিনী তৈরি করা এবং দেশীয় এআই উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা। এটি প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদী আত্মনির্ভরশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মানব পুঁজি বিকাশে এবং মৌলিক গবেষণা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই কৌশলগত বোঝাপড়াকে তুলে ধরে যে, এআই গ্রহণ এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী অপরিহার্য। এই পদক্ষেপটি এআই প্রতিভার একটি টেকসই সরবরাহ তৈরি করতে এবং দেশের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়নের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বিদেশী দক্ষতার উপর নির্ভরতা হ্রাস করে। এই একাডেমিক চাপ, যদি পর্যাপ্তভাবে সমর্থিত হয়, তবে বাংলাদেশকে কেবল এআই ভোক্তা থেকে একটি বিকাশকারী এবং উদ্ভাবকে রূপান্তরিত করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে এআইকে অধ্যাপক মামুনের 19 কল্পনা অনুযায়ী একটি প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত করতে পারে।
টেবিল ৩.৩: এআই/ডেটা সায়েন্স প্রোগ্রাম প্রদানকারী প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
| বিশ্ববিদ্যালয় (University) | প্রোগ্রাম/উদ্যোগ (Program/Initiative) | প্রধান ফোকাস (Key Focus) | প্রাসঙ্গিক স্নিপেট (Relevant Snippets) |
| United International University (UIU) | এইমস ল্যাব (AIMSLab), আইআরআইআইসি (IRIIIC) | শিক্ষা খাতের সমস্যা সমাধান, কর্মজীবনের দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের এআই ধারণায় সহায়তা | 19 |
| Green University of Bangladesh | বিএসসি ইন এআই অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স (বাংলাদেশে প্রথম), সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং | শিল্প সংযোগ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মান, ব্যবহারিক শিক্ষা | 20 |
| State University of Bangladesh | সিএসই বিভাগ এআই সেমিনার | এআই গবেষণা ও শিক্ষা উন্নয়ন, শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা | 22 |
৪. নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো
জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল ২০২০
বাংলাদেশ ২০২০ সালে একটি ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল’ প্রণয়ন করে, যা দেশে এআই গ্রহণ বাড়ানোর জন্য জাতীয় প্রতিশ্রুতি ও গুরুত্বকে নির্দেশ করে 3। এই কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল স্বয়ংক্রিয়করণ এবং ডিজিটালাইজেশনের বাইরে গিয়ে এআইকে শাসনব্যবস্থা এবং সমাজের মূল কাঠামোতে একীভূত করা, যাতে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন হয়, শিল্পগুলোর রূপান্তর ঘটে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয় 38।
তবে, এই কৌশল প্রণয়ন করা হলেও, এর বাস্তবায়ন সীমিত ছিল 41। ২০২0 সালের এআই কৌশলটির অস্তিত্ব, যদিও এর বাস্তবায়ন সীমিত ছিল, এআই-এর গুরুত্বের প্রাথমিক স্বীকৃতি নির্দেশ করে। তবে, এটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে কার্যকর, টেকসই বাস্তবায়নে রূপান্তর করার চ্যালেঞ্জগুলিও তুলে ধরে। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে নীতিগত স্তরে দূরদর্শিতা এবং কৌশলগত উদ্দেশ্য থাকলেও, বাস্তবায়নে বাধা, সম্পদ বরাদ্দ, আন্তঃসংস্থা সমন্বয়, বা সম্ভবত সাম্প্রতিক এআই অগ্রগতির (যেমন জেনারেটিভ এআই) আগ পর্যন্ত জরুরি অবস্থার অভাব ছিল। ভবিষ্যতের নীতিগত প্রচেষ্টাগুলিকে কেবল শক্তিশালী কাঠামোর উপরই নয়, বরং সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন রোডম্যাপ, পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া এবং অভিযোজনযোগ্য কৌশলগুলির উপরও মনোযোগ দিতে হবে যাতে সময়মতো এবং কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়।
জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ২০২৪ এর খসড়া: উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ২০২৪’ এর প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে, যা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 3।
উদ্দেশ্য: এই নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিশীল যুগে বাংলাদেশকে এআই উদ্ভাবন এবং গ্রহণে অগ্রগামী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এর মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরকে সহজতর করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সকল নাগরিকের মঙ্গলের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা 3।
মূল বিষয়বস্তু: খসড়া নীতিমালায় যেসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে:
- স্মার্ট বাংলাদেশ স্তম্ভ: স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট নাগরিক—এই চারটি স্তম্ভ তৈরিতে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে 3।
- জনসেবা ও বিচারিক ব্যবস্থা: স্মার্ট জনসেবা, শাসনব্যবস্থা এবং বিচারিক ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, ডেটা-চালিত নীতি তৈরি, এবং আইনি প্রক্রিয়া (মামলা প্রক্রিয়াকরণ, ট্র্যাকিং, সময়সূচি, আইনি গবেষণা, নথি বিশ্লেষণ, মামলার পূর্বাভাস) উন্নত করা 3।
- দক্ষ কর্মী বাহিনী: এআই প্রযুক্তি ব্যবহার ও তৈরিতে সক্ষম একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি করা 3।
- গবেষণা ও উদ্ভাবন: সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের মাধ্যমে এআই গবেষণা ও উদ্ভাবনের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা 3।
- নৈতিক কাঠামো: একটি শক্তিশালী নৈতিক কাঠামো তৈরি করা 3।
- ডেটা গভর্ন্যান্স ও নজরদারি: খসড়ায় জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে নজরদারি ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে, যা নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ ও রাষ্ট্রীয় নজরদারির মাধ্যমে ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কায়েমের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে 25।
নীতিমালা প্রণয়নের কারণ: এআই-এর নেতিবাচক ব্যবহারের ঝুঁকি (যেমন, ভুয়া ছবি, সাইবার অপরাধ) কমানো এবং এর অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এই নীতিমালা অপরিহার্য 3।
একটি ‘কৌশল’ থেকে একটি ব্যাপক ‘নীতিমালা’ এবং ‘আইন’-এর দিকে এই পরিবর্তন এআই-এর গভীর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে একটি পরিপক্ক বোঝাপড়ার ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল প্রযুক্তিগত গ্রহণ থেকে সক্রিয় শাসন এবং ঝুঁকি প্রশমনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে, ‘নিয়ন্ত্রণ’ এর উপর জোর, ‘উদ্ভাবন’ এর পাশাপাশি, একটি সতর্ক পদ্ধতির ইঙ্গিত দেয়, যা সাম্প্রতিক অপব্যবহারের ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এই নীতি কাঠামো জনসাধারণের বিশ্বাস তৈরি করতে এবং এআই-তে দায়িত্বশীল বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর সাফল্য উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং কার্যকর, অভিযোজনযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর নির্ভর করবে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার উদ্যোগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি বিভাগ):
আইসিটি বিভাগ ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা ২০২৪’ এর খসড়া প্রণয়নের দায়িত্বে রয়েছে 3। এই বিভাগ দেশীয় ওয়েবসাইটগুলোর সার্চ ইঞ্জিনকে আরও স্মার্ট করতে এআই ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে 5। বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে, এবং শীঘ্রই একটি ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা আইন (Personal Data Protection Act) চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে 5।
আইসিটি বিভাগের নীতি প্রণয়ন এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা এটিকে এআই গ্রহণ এবং শাসনের প্রধান অনুঘটক হিসেবে স্থাপন করে, যা সমগ্র ইকোসিস্টেমের জন্য এর কৌশলগত দিকনির্দেশনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগগুলি এআই-এর জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করার জন্য মৌলিক। নীতি, অবকাঠামো (ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস) এবং ডেটা সুরক্ষার উপর এর মনোযোগ এআই একীকরণের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতির প্রতিফলন। বাংলাদেশে এআই প্রসারের কার্যকারিতা মূলত আইসিটি বিভাগের সক্ষমতা, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় এবং শক্তিশালী ও অভিযোজনযোগ্য নীতি বাস্তবায়নের ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি):
বিটিআরসি এআই আইন খসড়া সংক্রান্ত আলোচনায় জড়িত রয়েছে 6। এটি টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে (যেমন, ৫জি পরিকল্পনা) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা এআই অবকাঠামোর জন্য অপরিহার্য 4। বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে, যা এআই-এর ডেটা প্রবাহ এবং সংযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 45।
বিটিআরসি-এর সম্পৃক্ততা এআই-এর ডেটা-নিবিড় ক্রিয়াকলাপগুলিকে সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে, যা সংযোগকে একটি মৌলিক সক্ষমতা হিসেবে জোর দেয়। এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলি, বিশেষ করে বিগ ডেটা এবং রিয়েল-টাইম প্রক্রিয়াকরণ (যেমন স্মার্ট সিটি, আইওটি, উন্নত অ্যানালিটিক্স) জড়িত অ্যাপ্লিকেশনগুলি, উচ্চ-গতির, নির্ভরযোগ্য এবং ব্যাপক ইন্টারনেট সংযোগের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই অবকাঠামো লাইসেন্সিং, নিয়ন্ত্রণ এবং সম্প্রসারণে বিটিআরসি-এর ভূমিকা তাই এআই-এর অপারেশনাল সক্ষমতাগুলির জন্য মৌলিক। স্পেকট্রাম বরাদ্দ, ডেটা মূল্য নির্ধারণ এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের বিষয়ে বিটিআরসি-এর নীতিগুলি এআই পরিষেবাগুলির ব্যয় এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতাকে সরাসরি প্রভাবিত করবে, যা এটিকে এআই গ্রহণকে উৎসাহিত করার একটি মূল খেলোয়াড় করে তোলে।
এটুআই (Aspire to Innovate):
আইসিটি বিভাগের অধীনে একটি সরকারি প্রকল্প, এটুআই সক্রিয়ভাবে এআই এবং আইওটি উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত ও সমর্থন করে 2। এটি ‘গিভ ডিরেক্টলি’ এর সাথে যৌথভাবে দারিদ্র্য মোকাবিলায় এআই ব্যবহারের উপর একটি আন্তর্জাতিক লার্নিং ইভেন্টের আয়োজন করেছে, যা ব্যবহারিক, সামাজিক প্রভাব প্রয়োগের উপর এর মনোযোগ প্রদর্শন করে 48। এই প্রকল্পে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে নগদ অর্থ সহায়তার জন্য দ্রুত সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়েছে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা-আক্রান্ত পরিবার এবং বন্যা ক্ষতিগ্রস্তরাও অন্তর্ভুক্ত 48।
এটুআই-এর ব্যবহারিক, সামাজিক-প্রভাব এআই প্রকল্পগুলির উপর মনোযোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য এআই-কে কাজে লাগানোর এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে, যা এআই বাস্তবায়নে একটি “মানব-কেন্দ্রিক” পদ্ধতির প্রদর্শন করে। এটুআই-এর এই বিশেষ মনোযোগ ইঙ্গিত দেয় যে সরকারের এআই কৌশল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষতার বাইরে সামাজিক কল্যাণ এবং মানবিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য প্রসারিত হয়েছে। এই “ভালোোর জন্য এআই” পদ্ধতি জনসাধারণের বিশ্বাস তৈরি করতে পারে এবং ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে এআই-এর বাস্তব সুবিধাগুলি প্রদর্শন করতে পারে, যা বৃহত্তর গ্রহণকে উৎসাহিত করবে। এই মনোযোগ বাংলাদেশকে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলির জন্য এআই সমাধান বিকাশে নেতৃত্ব দিতে পারে, যা সামাজিক প্রভাব সৃষ্টিকারী এআই উদ্যোগগুলির জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং তহবিল আকর্ষণ করবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব
বাংলাদেশ তার এআই সক্ষমতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় জড়িত হচ্ছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ‘লাইটক্যাসল পার্টনার্স’ এর সাথে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে তাদের ‘লাইভ স্কিলিং’ কর্মসূচি চালু করেছে, যার লক্ষ্য তরুণ পেশাদার এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এর মধ্যে এআই উদ্ভাবন বৃদ্ধি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো 50। মেটা বিশ্বব্যাপী এআই মডেল ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সেন্টার, সার্ভার এবং নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে ৬০-৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে 52।
অপো (OPPO) এবং হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি (PolyU) তাদের ‘পলিইউ-অপো জয়েন্ট ইনোভেশন রিসার্চ সেন্টার’ উন্নত করার জন্য একটি চুক্তি নবায়ন করেছে, যেখানে এআই ইমেজিং প্রযুক্তি এবং পিএইচডি ও পোস্টডক্টরাল গবেষকদের প্রশিক্ষণের উপর মনোযোগ দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে ন্যূনতম ৩০ মিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করা হবে 53। এটুআই-এর ইউএসএআইডি, গুগল.অর্গ এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির সাথে এআই-চালিত দারিদ্র্য বিমোচন এবং দুর্যোগ ত্রাণে সহযোগিতা বাংলাদেশে সামাজিক প্রভাব সৃষ্টিকারী এআই-এর জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রদর্শন করে 48। গত জুলাই মাসে ইউনেস্কোর ‘রেডিনেস অ্যাসেসম্যান্ট মেথোডোলজি’ (RAM) তে বাংলাদেশের যোগদান নৈতিক এআই অনুশীলনের বৈশ্বিক মানদণ্ডের প্রতি তার অঙ্গীকার নির্দেশ করে 9।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে প্রযুক্তি জায়ান্ট এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে, বাংলাদেশের এআই উন্নয়নে উল্লম্ফন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি উন্নত প্রযুক্তি, তহবিল এবং দক্ষতার অ্যাক্সেস প্রদান করে, যা অভ্যন্তরীণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা পূরণ করে। বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায় এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা (যেমন, জিপিইউ চ্যালেঞ্জ) বিবেচনা করে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, বৈশ্বিক সেরা অনুশীলন এবং উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করে যা অন্যথায় উপলব্ধ বা খুব ব্যয়বহুল হতে পারে। এটি সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক এআই ইকোসিস্টেমে একীকরণকে ত্বরান্বিত করে। এই ধরনের আরও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং উন্নত গবেষণার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশন অর্জনে এবং বৈশ্বিক এআই ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে অত্যাবশ্যক হবে।
৫. চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি
অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: জিপিইউ ও ডেটার অভাব
জিপিইউ চ্যালেঞ্জ: গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) এআই-এর ‘কাঁচামাল’ হিসেবে বিবেচিত 55। ভারতের মতো দেশ যেখানে বিপুল সংখ্যক জিপিইউ অর্ডার করেছে, সেখানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুর থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জিপিইউ আমদানি করে, যা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে 55। উদ্যোক্তারা জিপিইউ সরবরাহে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব অনুভব করেন। তাদের মতে, সরকার যদি একটি এআই সেন্টার স্থাপন করে উদ্যোক্তাদের কাছে জিপিইউ ভাড়া দেয়, তাহলে তা ইকোসিস্টেমের জন্য লাভজনক হবে 55। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এআই উন্নয়নের জন্য ঋণ দিতে চায় না, কারণ এআই একটি স্পর্শযোগ্য পণ্য নয়। এটি এআই উদ্যোক্তাদের বিকল্প তহবিল উৎস খুঁজতে বাধ্য করে 55।
ডেটা স্বল্পতা ও গুণমান: এআই-এর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো পর্যাপ্ত এবং সঠিক ডেটার অভাব, বিশেষ করে গবেষণা ও উন্নয়নের (আরএন্ডডি) ক্ষেত্রে 2। এআই-এর কার্যকারিতা বিপুল পরিমাণ ডেটার উপর নির্ভরশীল (যেমন, শনাক্তকরণের জন্য হাজার হাজার ছবি) 4। প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডেটার গুণগত মান এবং নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা বৈষম্যমূলক ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমনটি অ্যামাজনের নিয়োগ এআই-এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে 29। বাংলাদেশের বেশিরভাগ তথ্য এখনও ডিজিটাইজড হয়নি, যার ফলে ডেটাবেসগুলোতে অসম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে 29।
জিপিইউ অ্যাক্সেস এবং ডেটা গুণমান/লভ্যতার মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলি বাংলাদেশের এআই উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বাধা তৈরি করে। এটি মৌলিক এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলির বাইরে উন্নত গবেষণা ও উন্নয়নে অগ্রসর হওয়া কঠিন করে তোলে এবং ত্রুটিপূর্ণ এআই মডেলগুলির মাধ্যমে বিদ্যমান সামাজিক পক্ষপাতগুলিকে সম্ভাব্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। জিপিইউগুলি জটিল এআই মডেল (ডিপ লার্নিং) প্রশিক্ষণের জন্য অপরিহার্য। সাশ্রয়ী এবং অ্যাক্সেসযোগ্য জিপিইউ ছাড়া, স্থানীয় বিকাশকারীরা অত্যাধুনিক এআই তৈরি করতে পারে না। একইভাবে, এআই মডেলগুলি তাদের প্রশিক্ষণ ডেটার মতো ভাল। গুণমান, প্রতিনিধি এবং ডিজিটাইজড ডেটার অভাবের অর্থ হল বাংলাদেশে তৈরি এআই মডেলগুলি কম কার্যকর হতে পারে বা এমনকি বিদ্যমান পক্ষপাতগুলি (যেমন নিয়োগ বা আইনি সিদ্ধান্তে) স্থায়ী করতে পারে। এটি উদ্ভাবন এবং ব্যাপক প্রয়োগযোগ্যতাকে সীমিত করে। এই মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সরকার কর্তৃক শেয়ার্ড কম্পিউটিং সংস্থানগুলিতে (জিপিইউ সহ এআই সেন্টার) উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, শক্তিশালী ডেটা ডিজিটাইজেশন উদ্যোগ এবং ডেটা সংগ্রহ এবং পক্ষপাত প্রশমনের জন্য কঠোর নির্দেশিকা প্রয়োজন যাতে ন্যায়সঙ্গত এবং কার্যকর এআই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।
দক্ষ মানবসম্পদের অভাব
অধ্যাপক বি.এম. মইনুল হোসেন উল্লেখ করেছেন যে, এআই-এর জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ বিকাশে বাংলাদেশের উদ্যোগ অপর্যাপ্ত 55। যদিও বাংলাদেশের তরুণরা এআই বিষয়ে কৌতূহলী, তবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পেশাদার তৈরি করার জন্য একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থার প্রয়োজন 4।
শিক্ষাগত প্রোগ্রামগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সত্ত্বেও দক্ষ এআই পেশাদারদের এই ঘাটতি, শিক্ষাগত আউটপুট এবং শিল্পের চাহিদার মধ্যে একটি ব্যবধান বা ব্যবহারিক, উন্নত প্রশিক্ষণের অভাব নির্দেশ করে, যা এআই গ্রহণ এবং উদ্ভাবনকে ধীর করে দিতে পারে। এমনকি নীতিগত উদ্দেশ্য এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রাম থাকা সত্ত্বেও, উচ্চ দক্ষ এআই প্রকৌশলী, ডেটা বিজ্ঞানী এবং নীতিবিদদের একটি গুরুতর ঘাটতি জটিল এআই সিস্টেমগুলির বিকাশ, স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণে বাধা দেবে। এর ফলে বিদেশী দক্ষতার উপর নির্ভরতা, উচ্চ ব্যয় এবং ধীর উদ্ভাবন চক্র হতে পারে। এআই মানবসম্পদ বিকাশের জন্য একটি ব্যাপক জাতীয় কৌশল, যার মধ্যে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা এবং প্রতিভা ধরে রাখার জন্য প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত, এআই-এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ: পক্ষপাত, গোপনীয়তা ও নজরদারি
অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত: এআই সিস্টেম, যদি পক্ষপাতদুষ্ট ডেটার উপর প্রশিক্ষিত হয় (যেমন, পুরুষদের পক্ষে ঐতিহাসিক নিয়োগ ডেটা), তাহলে এটি বিদ্যমান সামাজিক পক্ষপাতগুলিকে (যেমন, লিঙ্গ, সংখ্যালঘু বৈষম্য) স্থায়ী করতে এবং এমনকি বাড়িয়ে তুলতে পারে 29। নিয়োগ এবং আইনি সিদ্ধান্তের (যেমন, বিবাহ/বিচ্ছেদ মামলা) মতো ক্ষেত্রগুলোতে এটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক 29।
গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষা: এআই-এর ব্যাপক ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ উল্লেখযোগ্য গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি করে 7। খসড়া এআই নীতিমালায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর ডেটা ব্যবহারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সুস্পষ্ট সুরক্ষার অভাব একটি উদ্বেগের বিষয়, কারণ ব্যবহৃত বেশিরভাগ এআই সিস্টেম বিদেশী এবং ডেটা বিদেশে সংরক্ষণ করা হয় 29।
নজরদারি ও ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ ঝুঁকি: খসড়া এআই নীতিমালার ৪.২.৬ ধারায় জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে নজরদারি ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে, যা টিআইবি এবং আর্টিকেল নাইনটিন সতর্ক করেছে যে এটি ব্যাপক নাগরিক ডেটা বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারির মাধ্যমে ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কায়েমের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে 25।
অংশীজনদের অংশগ্রহণের অভাব: নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলো (টিআইবি, আর্টিকেল নাইনটিন) খসড়া এআই নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে, যদিও এই নীতির নাগরিকদের অধিকার ও আইনের শাসনের উপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে 25। তারা নীতি প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে এবং এআই উপদেষ্টা পরিষদে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলো সহ সকল অংশীজনের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে 25।
অনিশ্চিত এআই ফলাফল: স্বচ্ছতা থাকা সত্ত্বেও, জটিল এআই মডেলগুলো (যেমন ডিপ লার্নিং) ‘ব্ল্যাক বক্স’ হতে পারে, যার ফলে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে 1।
বাংলাদেশে এআই ঘিরে নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে পক্ষপাত, গোপনীয়তা এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারি সম্পর্কিত, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মৌলিক মানবাধিকারের মধ্যে একটি গুরুতর উত্তেজনা তৈরি করে। যদি এই বিষয়গুলি সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তবে এটি জনসাধারণের বিশ্বাস এবং ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এআই সামাজিক অসমতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সম্ভাব্য অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা একটি উপকারী প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়নের অভাব এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে যা নাগরিক অধিকারের উপর রাষ্ট্রীয়/কর্পোরেট স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, যার ফলে অবিশ্বাস এবং প্রতিরোধ তৈরি হয়। একটি শক্তিশালী এআই শাসন কাঠামোকে অবশ্যই মানবাধিকার, ডেটা নীতিশাস্ত্র এবং স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর জন্য বহু-অংশীজন সংলাপ, স্বাধীন তদারকি এবং কঠোর জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া প্রয়োজন যাতে এআই জনকল্যাণে কাজ করে এবং বৈষম্য বা নিপীড়নের হাতিয়ার না হয়।
টেবিল ৫.১: এআই বাস্তবায়নে প্রধান নৈতিক ও আইনি উদ্বেগসমূহ
| উদ্বেগের ক্ষেত্র (Area of Concern) | বিবরণ (Description) | উদাহরণ/প্রভাব (Example/Implication) | প্রাসঙ্গিক স্নিপেট (Relevant Snippets) |
| অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত (Algorithmic Bias) | প্রশিক্ষণের জন্য পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা ব্যবহারের ফলে এআই সিস্টেমে বৈষম্য সৃষ্টি | নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য, বিবাহ/বিচ্ছেদ মামলায় প্রান্তিকদের বাদ পড়া | 29 |
| ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা (Data Protection & Privacy) | ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপক সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিদেশী কোম্পানি দ্বারা ডেটা ব্যবহারের ঝুঁকি | নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, রাষ্ট্রীয় নজরদারি, ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কায়েমের ঝুঁকি | 7 |
| নজরদারি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা (Surveillance & State Power) | জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে এআই-চালিত নজরদারি ব্যবস্থার অপব্যবহারের সম্ভাবনা | নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ, ভুয়া তথ্য প্রচার রোধের নামে নজরদারি | 25 |
| জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা (Accountability & Transparency) | এআই সিদ্ধান্তের ‘ব্ল্যাক বক্স’ সমস্যা, ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধতার অভাব | এআই-এর ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কে দায়ী থাকবে তা অস্পষ্টতা | 1 |
| নীতি প্রণয়নে অংশীজনদের অভাব (Lack of Stakeholder Involvement in Policy) | নাগরিক অধিকার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে নীতি প্রণয়নে যুক্ত না করা | নীতিমালার স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন | 25 |
কর্মসংস্থানে প্রভাব ও বেকারত্বের শঙ্কা
বিশ্বব্যাপী এআই-এর কারণে চাকরি হারানোর ব্যাপক ভয় রয়েছে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে এআই প্রায় ৯০ মিলিয়ন চাকরি দখল করতে পারে 24। এআই-এর কাজ সহজে ও সস্তায় করার ক্ষমতার কারণে কোম্পানিগুলো মানবসম্পদ কমানোর কথা ভাবছে 58।
তবে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে কিছু চাকরি হারালেও, এআই বিশ্বব্যাপী ৭৫ মিলিয়ন নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে, যার ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নিট ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে 58। বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার এবং এআই/মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞের মতো নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে 15। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এআই এবং আইওটি যদিও কিছু চাকরি স্থানচ্যুত করতে পারে, তবে ১৮ কোটি মানুষের দেশে সবকিছু ম্যানুয়ালি করা সম্ভব নয়, তাই এআই ব্যবহার অপরিহার্য। এআই-এর ব্যবহার অপচয় কমাবে, কার্যকর কাজ নিশ্চিত করবে এবং নতুন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে উৎপাদন বাড়াবে 2।
বাংলাদেশে এআই এবং কর্মসংস্থান নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা বৈশ্বিক উদ্বেগ এবং সুযোগের একটি সাধারণ চিত্র তুলে ধরে। তবে, বাংলাদেশের অনন্য জনসংখ্যাগত প্রেক্ষাপট (বৃহৎ জনসংখ্যা, উন্নয়নশীল অর্থনীতি) কর্মীবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে পুনর্গঠন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে, যাতে ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতা এড়ানো যায়। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে, পর্যাপ্ত নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না করে ব্যাপক আকারের চাকরি স্থানচ্যুতি উল্লেখযোগ্য সামাজিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণ হতে পারে। তবে, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এবং নতুন, উচ্চ-দক্ষতার চাকরি তৈরি করার এআই-এর ক্ষমতা অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং প্রতিযোগিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চ্যালেঞ্জটি হল এই পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা। বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী জাতীয় কৌশল প্রয়োজন যা কর্মীবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পুনর্গঠনের উপর মনোযোগ দেবে, এআই সাক্ষরতা এবং বিশেষায়িত এআই দক্ষতার উপর জোর দেবে, যাতে তার বৃহৎ শ্রমশক্তি পরিবর্তিত চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এআই-কে কাজে লাগাতে পারে।
ভুয়া তথ্য ও ডিপফেকসের ঝুঁকি
এআই-এর ব্যাপক ব্যবহার মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, ভুয়া ভিডিও (ডিপফেক) তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে এর অপব্যবহারের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে সহজ করে তোলে 3। জেনারেটিভ এআই ডিজিটাল ছবি ও ভিডিও বিকৃত করাকে আরও সহজ করে তোলে, যা ভুল তথ্য ও অপতথ্যের ঝুঁকি বাড়ায় এবং গণসহিংসতা ও ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য 7।
ডিপফেক, এআই-জেনারেটেড ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া, একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে, যার মধ্যে প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির নতুন রূপ অন্তর্ভুক্ত, যা ব্ল্যাকমেইল, সামাজিক অপমান এবং এমনকি আত্মহত্যার কারণ হতে পারে 29।
এআই-জেনারেটেড ভুল তথ্য এবং ডিপফেকসের বিস্তার বাংলাদেশে সামাজিক সংহতি, জনসাধারণের বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য একটি গুরুতর হুমকি তৈরি করে। এর জন্য কেবল প্রযুক্তিগত পাল্টা ব্যবস্থা নয়, বরং শক্তিশালী আইনি কাঠামো এবং জনসাধারণের মধ্যে এআই সাক্ষরতা অভিযানও প্রয়োজন। ডিপফেকস এবং ভুল তথ্য দ্রুত সমাজকে অস্থিতিশীল করতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলির উপর বিশ্বাস ক্ষয় করতে পারে এবং সহিংসতা উস্কে দিতে পারে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক এবং শাসনব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সনাক্তকরণ প্রযুক্তি অপর্যাপ্ত, যা প্রতিরোধ এবং আইনি প্রতিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। বাংলাদেশের এআই নীতিমালায় ভুল তথ্যের জন্য এআই-এর দূষিত ব্যবহারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এর সাথে জনসচেতনতা অভিযান এবং ডিপফেক সনাক্তকরণ গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষিত থাকে।
সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ও জবাবদিহিতা
বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এআই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত বা সুসংগঠিত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, যার মধ্যে নীতি বা কৌশলের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত 41। এআই সিস্টেম দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির জন্য সুস্পষ্ট জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে 42। বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন যে, এআই নীতিমালার পাশাপাশি একটি ব্যাপক ‘ডেটা সুরক্ষা আইন’, ‘উদ্ভাবন সূচক’ এবং ‘ইউজার ডুয়িং বিজনেস’ কাঠামো না থাকলে এআই-এর পূর্ণ সুবিধা অর্জন করা সম্ভব নয় 41।
সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা প্রক্রিয়াগুলির অনুপস্থিতি একটি খণ্ডিত এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এআই উন্নয়ন পরিবেশ তৈরি করে, যা কার্যকর শাসনব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এআই সিস্টেমগুলির উপর বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করে। একটি কেন্দ্রীয়, সমন্বিত সংস্থা এবং দায়িত্বের সুস্পষ্ট রেখা ছাড়া, এআই উদ্যোগগুলি অপ্রয়োজনীয়, অদক্ষ বা এমনকি পরস্পরবিরোধী হতে পারে। আরও গুরুতরভাবে, যদি ক্ষতি হয় (যেমন, পক্ষপাতদুষ্ট অ্যালগরিদম বা সিস্টেম ব্যর্থতা থেকে), জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং জনসাধারণের গ্রহণ এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক ভিত্তি ক্ষুণ্ন করে। এআই সিস্টেমগুলির জন্য সুস্পষ্ট ভূমিকা, দায়িত্ব এবং আইনি জবাবদিহিতা সহ একটি শক্তিশালী শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, এর সাথে একটি ব্যাপক ডেটা সুরক্ষা কাঠামো, নিরাপদ, নৈতিক এবং কার্যকর এআই স্থাপন নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশী কোম্পানি দ্বারা ডেটা ব্যবহারের উদ্বেগ
বর্তমান এআই নীতিমালার খসড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ডেটা বিদেশী কোম্পানিগুলোর দ্বারা সংগ্রহ ও ব্যবহার থেকে পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষা দেয় না 29। বাংলাদেশি নাগরিকদের ডেটার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশী ডেটা সেন্টারে সংরক্ষিত থাকে, কারণ বাংলাদেশে ব্যবহৃত বেশিরভাগ এআই সিস্টেম বিদেশী কোম্পানিগুলো (যেমন, গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা, টিকটক) সরবরাহ করে 29। এই বিদেশী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের ডেটার উপর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে 29।
বিদেশী এআই সিস্টেম এবং অফশোর ডেটা স্টোরেজের উপর ব্যাপক নির্ভরতা একটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। এটি পর্যাপ্ত স্থানীয় আইনি সুরক্ষা ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ডেটা বিদেশী বিচারব্যবস্থা এবং কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি করতে পারে। এই নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। এটি এমন একটি দুর্বলতা তৈরি করে যেখানে সংবেদনশীল জাতীয় এবং ব্যক্তিগত ডেটা বিদেশী আইন, নজরদারি বা কর্পোরেট শোষণের শিকার হতে পারে। এটি বাংলাদেশের তার ডিজিটাল ভবিষ্যতকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করার এবং একটি সত্যিকারের স্বাধীন এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন উত্থাপন করে। বাংলাদেশ জরুরীভাবে শক্তিশালী ডেটা স্থানীয়করণ নীতি তৈরি করতে, দেশীয় ডেটা অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে এবং জাতীয় স্বার্থ ও নাগরিক গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য বিদেশী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির সাথে চুক্তিতে শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা ধারাগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
৬. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সুপারিশমালা
স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এআই-এর ভূমিকা
এআই-কে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডার একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে পজিশন করা হয়েছে, যা একটি উচ্চ-স্তরের কৌশলগত প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। এটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং নীতিগত মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, তবে এআই-এর রূপান্তরমূলক ক্ষমতার উপর উচ্চ প্রত্যাশাও তৈরি করে। এই উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক অনুমোদন এআই-কে কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রবণতা থেকে একটি জাতীয় কৌশলগত অপরিহার্যতায় উন্নীত করে। এই শীর্ষ-ডাউন প্রতিশ্রুতি উল্লেখযোগ্য সরকারি সম্পদ উন্মোচন করতে পারে, নীতি প্রণয়নকে সুগম করতে পারে এবং পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করতে পারে, যা সমস্ত খাতে এআই গ্রহণকে ত্বরান্বিত করবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর সাফল্য মূলত এর বিভিন্ন উপাদান জুড়ে এআই-এর কার্যকর এবং নৈতিক বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করবে, যার জন্য টেকসই রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ক্রস-সেক্টরাল সহযোগিতা প্রয়োজন।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
এআই কিছু চাকরি স্থানচ্যুত করলেও, এটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে বিগ ডেটা, ফিনটেক এবং এআই/মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞের মতো ক্ষেত্রগুলোতে 15। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশি তরুণদের মেধা ও সক্ষমতা বিবেচনা করে এআই প্রযুক্তি গার্মেন্টস খাতের চেয়েও বড় রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে 19। এআই বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, অপচয় হ্রাস এবং কার্যকর কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে পারে 1।
গার্মেন্টসকে ছাড়িয়ে এআইকে একটি প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী এবং রূপান্তরমূলক। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিচয়কে শ্রম-নিবিড় উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জ্ঞান-ভিত্তিক, উচ্চ-প্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারীতে স্থানান্তরিত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করে। কম-দক্ষতা, উচ্চ-পরিমাণ উৎপাদন (গার্মেন্টস) থেকে উচ্চ-দক্ষতা, মূল্য সংযোজিত এআই পরিষেবাগুলিতে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণা ও উন্নয়ন অবকাঠামো এবং বিনিয়োগ পরিবেশের সম্পূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন। এটি বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে উপরে ওঠার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নির্দেশ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য এআই শিক্ষা, গবেষণা এবং ইনকিউবেশনে আক্রমণাত্মক বিনিয়োগের পাশাপাশি উচ্চ-প্রযুক্তি খাতে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণকারী এবং একটি প্রাণবন্ত স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে উৎসাহিতকারী নীতি প্রয়োজন।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এআই গবেষণা ও উদ্ভাবনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 3। একটি জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেন্টার অব এক্সিলেন্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আঞ্চলিক গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) সুবিধা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে 38। ইউআইইউ-এর ল্যাব এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির নতুন এআই প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগগুলো এই দিকেই একটি পদক্ষেপ 19।
স্থানীয় এআই গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া বাংলাদেশের জন্য কেবল বিদেশী এআই-এর ভোক্তা হওয়া এড়াতে অপরিহার্য। এটি দেশকে প্রসঙ্গ-নির্দিষ্ট সমাধান বিকাশে এবং প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে সক্ষম করে। কেবল আমদানি করা এআই সমাধানগুলির উপর নির্ভরতা নির্ভরতা, স্থানীয় প্রয়োজনের জন্য কাস্টমাইজেশনের অভাব এবং সম্ভাব্য ডেটা সার্বভৌমত্ব সমস্যাগুলির দিকে নিয়ে যেতে পারে। দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়ন বাংলাদেশকে তার অনন্য চ্যালেঞ্জগুলির (যেমন কৃষি, গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যসেবা, বাংলা ভাষা প্রক্রিয়াকরণ) জন্য তৈরি এআই সমাধান বিকাশ করতে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি তৈরি করতে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি করে। সরকার কর্তৃক তহবিল, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য কর প্রণোদনা এবং শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষা স্থানীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে এবং একটি স্বাবলম্বী এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করতে অত্যাবশ্যক।
নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর সংস্কার ও বাস্তবায়ন
স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা:
টিআইবি এবং আর্টিকেল নাইনটিন নাগরিক অধিকার সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সকল প্রাসঙ্গিক অংশীজনের এআই নীতি প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে এবং এআই উপদেষ্টা পরিষদে অংশগ্রহণের জন্য জোরালোভাবে সমর্থন করে 25। এটি একটি ব্যাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির নিশ্চয়তা দেয় যা নাগরিকদের উপর বহুমুখী প্রভাবকে বিবেচনা করে।
নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন অংশীজনকে জড়িত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ন জনসাধারণের বিশ্বাস তৈরি করতে এবং এআই শাসন কাঠামো ন্যায়সঙ্গত, মানব-কেন্দ্রিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনিচ্ছাকৃত ক্ষতি বা অপব্যবহারের ঝুঁকি হ্রাস করে। নাগরিক সমাজকে বাদ দিলে এমন নীতি তৈরি হতে পারে যা মানবাধিকার, গোপনীয়তা এবং সামাজিক সমতা সম্পর্কিত উদ্বেগগুলিকে উপেক্ষা করে, যার ফলে পক্ষপাতদুষ্ট এআই সিস্টেম, নজরদারির ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া একটি আরও শক্তিশালী, বৈধ এবং ব্যাপকভাবে গৃহীত নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিশ্চিত করে। সরকার কর্তৃক নীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, আইনবিদ এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সহ বিস্তৃত পরিসরের বিশেষজ্ঞদের সক্রিয়ভাবে জড়িত করা উচিত, যাতে এআই নীতি ব্যাপক, ন্যায্য এবং অভিযোজনযোগ্য হয়।
ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিতকরণ:
একটি শক্তিশালী ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা আইন নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে এআই সিস্টেম দ্বারা ব্যাপক ডেটা সংগ্রহ এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোর ডেটা ব্যবহার সম্পর্কিত উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে 5। নীতিমালায় হ্যাকিং, স্প্যামিং এবং ভুয়া বিষয়বস্তু তৈরির মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপে এআই-এর ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হবে, যা ডেটা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাকে হুমকির মুখে ফেলে 25।
ব্যাপক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা এবং গোপনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া কেবল একটি সম্মতিগত বিষয় নয়, বরং নৈতিক এআই উন্নয়নের জন্য একটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা। এটি নাগরিক বিশ্বাসকে উৎসাহিত করে এবং একটি ক্রমবর্ধমান ডেটা-চালিত বিশ্বে জাতীয় ডেটা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের এআই নীতিমালায় শক্তিশালী বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা করে, ডেটা স্থানীয়করণ নীতিগুলি বিবেচনা করে এবং বিদেশী প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সাথে চুক্তিগুলিতে কঠোর ডেটা সুরক্ষা ধারাগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। এটি নিশ্চিত করবে যে বাংলাদেশের ডেটা তার নাগরিকদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয় এবং বিদেশী বিচারব্যবস্থা বা কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের শিকার না হয়।
জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি:
এআই সিস্টেমের ‘ব্ল্যাক বক্স’ সমস্যা এবং ক্ষতির জন্য জবাবদিহিতার অভাব মোকাবিলা করা জরুরি 1। একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে এআই দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির জন্য কে দায়ী থাকবে তা স্পষ্ট হয় 41। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এআই আইন এবং জিডিপিআর (GDPR) এর মতো আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রেক্ষাপাপটে একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে, যা অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত এবং অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করবে 29।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি:
এআই ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব মোকাবিলায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে 4। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এআই ও ডেটা সায়েন্সে বিশেষায়িত কোর্স চালু এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে 19। শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্বে একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারে 19।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
এআই-এর জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার, বিশেষ করে জিপিইউ-এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকার একটি এআই সেন্টার স্থাপন করে উদ্যোক্তাদের কাছে জিপিইউ ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে 55। এছাড়া, উচ্চ গতির ফাইবার অপটিকভিত্তিক কানেক্টিভিটি এবং ৫জি নেটওয়ার্কের মতো টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো বৃদ্ধি করা অপরিহার্য 4।
উপসংহার
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তার একটি আশাব্যঞ্জক প্রবণতা, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, আর্থিক খাত, শিক্ষা এবং জনসেবার মতো বিভিন্ন খাতে এআই-এর ক্রমবর্ধমান প্রয়োগ দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের গতিকে ত্বরান্বিত করছে। তরুণ উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ এই প্রসারে সহায়ক হচ্ছে।
তবে, এই সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান, যা এআই-এর টেকসই ও নৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। জিপিইউ এবং মানসম্মত ডেটার অভাব, দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি, এবং অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত, ডেটা সুরক্ষা, গোপনীয়তা ও রাষ্ট্রীয় নজরদারির মতো নৈতিক ও আইনি উদ্বেগগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভুয়া তথ্য ও ডিপফেকসের ঝুঁকি এবং সমন্বিত পরিকল্পনা ও জবাবদিহিতার অভাবও এআই-এর দায়িত্বশীল বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এবং এআই-এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নিম্নলিখিত সুপারিশমালা বিবেচনা করা যেতে পারে:
- অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ন: ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা ২০২৪’ এর চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক অধিকার সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সকল প্রাসঙ্গিক অংশীজনকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা উচিত। এটি একটি ন্যায়সঙ্গত, মানব-কেন্দ্রিক এবং স্বচ্ছ নীতি কাঠামো নিশ্চিত করবে।
- শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা আইন: একটি ব্যাপক ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য, যা নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবে এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোর দ্বারা ডেটা ব্যবহারের ঝুঁকি মোকাবিলা করবে।
- অবকাঠামোগত বিনিয়োগ: এআই-এর জন্য অপরিহার্য গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) অবকাঠামোতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত, যেমন একটি কেন্দ্রীয় এআই সেন্টার স্থাপন করে উদ্যোক্তাদের কাছে জিপিইউ ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা। উচ্চ গতির ইন্টারনেট এবং ৫জি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণও জরুরি।
- মানবসম্পদ উন্নয়ন: এআই সাক্ষরতা এবং বিশেষায়িত এআই দক্ষতা বিকাশের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কর্মসূচী চালু করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এআই ও ডেটা সায়েন্সে আরও কোর্স ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।
- নৈতিক এআই বাস্তবায়ন: এআই সিস্টেমের ডিজাইন ও বাস্তবায়নে নৈতিক নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত, যাতে অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত হ্রাস পায় এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। এআই-এর ‘ব্ল্যাক বক্স’ সমস্যা মোকাবিলায় গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করা উচিত।
- অপব্যবহার রোধে কঠোর ব্যবস্থা: ভুয়া তথ্য, ডিপফেক এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এআই-এর অপব্যবহার রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সমাধান উভয়ই প্রয়োজন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত সনাক্তকরণ ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি।
- সমন্বিত শাসনব্যবস্থা: এআই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া স্থাপন করা উচিত, যা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের সামনে এআই বিপ্লবের সুফল গ্রহণ করে একটি স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার এক অনন্য সুযোগ রয়েছে। সঠিক কৌশল, কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সকল অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব।
রেফারেন্স:
- এআই বিপ্লব : আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ | | বাংলাদেশ প্রতিদিন, accessed on July 12, 2025, https://www.bd-pratidin.com/various/2025/07/13/1135814
- বাংলাদেশেও বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার – DW – 03.02.2023, accessed on July 12, 2025, https://www.dw.com/bn/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0/a-64606749
- যে কারণে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ আইন তৈরির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ, accessed on July 12, 2025, https://www.dhakapost.com/exclusive/272427
- বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে – কমপিউটার জগৎ, accessed on July 12, 2025, https://www.computerjagat.com.bd/post/283
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে দেশীয় ও… – Somoy Tv, accessed on July 12, 2025, https://www.somoynews.tv/news/2024-06-23/5SBAKBX1
- এআই আইন কেন গুরুত্বপূর্ণ, জানালেন আইনমন্ত্রী – Somoy Tv, accessed on July 12, 2025, https://www.somoynews.tv/news/2024-04-04/LWUw8Zsv
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক ব্যবহার – Risingbd.com, accessed on July 12, 2025, https://www.risingbd.com/campus/news/521095
- প্রবীণদের স্বাস্থ্য-সহায়তায় এআই ও উন্নত প্রযুক্তি – Thikana News, accessed on July 12, 2025, https://www.thikananews.com/31768/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A3%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87-%E0%A6%93-%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) ভবিষ্যৎ নয়, এটি এখন আমাদের বর্তমান, accessed on July 12, 2025, https://www.dailyjanakantha.com/science-technology/news/828107
- চিকিৎসার জগতে ঝড় তুললো মাইক্রোসফট—রোগ শনাক্তে ৮/১০ সফলতা এআই-এর! – Daily Janakantha, accessed on July 12, 2025, https://www.dailyjanakantha.com/science-technology/news/827790
- বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | চ্যানেল আই অনলাইন, accessed on July 12, 2025, https://www.channelionline.com/artificial-intelligence-in-agricultural-development-of-bangladesh/
- কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | বিজ্ঞানচিন্তা – Bigganchinta, accessed on July 12, 2025, https://www.bigganchinta.com/technology/r8uzvplr5n
- স্মার্ট_কৃষিতে_কৃত্রিম_বুদ্ধিমত, accessed on July 12, 2025, https://ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/%E0%A7%A7%E0%A7%AA%E0%A7%A9%E0%A7%A6/%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A3/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F_%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87_%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE_%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0_%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0
- এআই প্রযুক্তিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তে বাংলাদেশের আর্থিক …, accessed on July 12, 2025, https://rtvonline.com/amp/technology/332995
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় কয়েকটি খাতে বাড়ছে চাকরি – প্রথম আলো, accessed on July 12, 2025, https://www.prothomalo.com/chakri/chakri-suggestion/qy98rhnyl7
- শিক্ষায় এআই (AI) ও আগামীর ভাবনা – শিক্ষক বাতায়ন, accessed on July 12, 2025, https://www.teachers.gov.bd/blog/details/825838
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কি এবং উত্থান ও ব্যবহার (AI) | অভিনব স্কুল | Abhinobo School, accessed on July 12, 2025, https://abhinoboschool.com/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87/
- বছরজুড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলোচিত এআই সফটওয়্যার – শিক্ষক বাতায়ন, accessed on July 12, 2025, https://teachers.gov.bd/index.php/blog/details/794985
- এআই প্রযুক্তি গার্মেন্টসের চেয়ে বড় রপ্তানি খাত হতে পারে | প্রথম আলো, accessed on July 12, 2025, https://www.prothomalo.com/bangladesh/vt2ym9swr1
- দেশে প্রথমবারের মতো এআই অ্যান্ড ডাটা সায়েন্সে অনার্স চালু, accessed on July 12, 2025, https://www.ittefaq.com.bd/702776/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8B-%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A7%87
- দেশে ‘এআই’ নিয়ে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু – Dhaka Post, accessed on July 12, 2025, https://www.dhakapost.com/exclusive/334844
- স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে এআই বিষয়ক সেমিনার – Protidiner Bangladesh, accessed on July 12, 2025, https://protidinerbangladesh.com/education/131853/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%85%E0%A6%AC-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%9F%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0
- accessed on January 1, 1970, https://protidinerbangladesh.com/education/131853/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%85%E0%A6%AC-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%9F%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0
- AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর সুবিধা ও অসুবিধা – entOrk, accessed on July 12, 2025, https://entork.com/advantages-and-disadvantages-of-ai/
- এআই নীতি প্রণয়নে নাগরিক অধিকার সংস্থাসহ সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করুন, accessed on July 12, 2025, https://www.rupalibangladesh.com/national-news/3302
- বাংলাদেশে নিউজরুমে এআই ব্যবহারে অগ্রগতি কম – SAMAKAL, accessed on July 12, 2025, https://samakal.com/bangladesh/article/262181/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%97%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%AE
- স্মার্ট হেলথ কেয়ার: জানুন কিভাবে প্রযুক্তি চিকিৎসা পদ্ধতিকে নতুন আকার দিচ্ছে | HealthTrip, accessed on July 12, 2025, https://www.healthtrip.com/bn/blog/smart-healthcare-technology-reshaping-medical-practices
- কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারে অন্তরায় নিরক্ষরতা |AI in Agriculture – YouTube, accessed on July 12, 2025, https://www.youtube.com/watch?v=zhh0pykM–4
- techglobalinstitute.com, accessed on July 12, 2025, https://techglobalinstitute.com/wp-content/uploads/2024/09/Salwa-Hoque_bengali_Siyam-Rupali.pdf
- Intelligent Machines – Startup Bangladesh Limited, accessed on July 12, 2025, https://www.startupbangladesh.vc/portfolio/intelligent-machines/
- Intelligent Machines: Intelligent by design, humane by choice | The Business Standard, accessed on July 12, 2025, https://www.tbsnews.net/features/panorama/intelligent-machines-intelligent-design-humane-choice-392094
- Top Artificial Intelligence Companies in Bangladesh – July 2025 …, accessed on July 12, 2025, https://www.goodfirms.co/artificial-intelligence/bangladesh
- Top 19 AI Companies in Bangladesh [Top-Rated B2B Directory] – Jul …, accessed on July 12, 2025, https://www.designrush.com/agency/ai-companies/bd
- Socian company information, funding & investors – Dealroom.co, accessed on July 12, 2025, https://app.dealroom.co/companies/socian
- Speak – The language learning app that gets you speaking, accessed on July 12, 2025, https://www.speak.com/
- SpeakX: AI Powered English Learning App | Improve English Speaking Skills, accessed on July 12, 2025, https://www.speakx.ai/
- ভবিষ্যত উন্নয়নের লক্ষ্যে এলজি’র এআই গবেষণা কেন্দ্র – bdnews24.com, accessed on July 12, 2025, https://bangla.bdnews24.com/tech/article1834909.bdnews
- National Strategy for Artificial Intelligence – Bangladesh | Digital Watch Observatory, accessed on July 12, 2025, https://dig.watch/resource/national-strategy-for-artificial-intelligence-bangladesh
- এআই নীতিমালা : সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ – Daily Sylhet Mirror, accessed on July 12, 2025, https://dailysylhetmirror.com/news/63570
- h&s^n – জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি), accessed on July 12, 2025, https://napd.portal.gov.bd/sites/default/files/files/napd.portal.gov.bd/miscellaneous_info/e90e8ef1_bba8_4ce6_84cb_e0944916acd2/2022-11-19-09-02-cbd9f209b4e82542de6c156f4de493b5.pdf
- এআই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত? – Daily Sun, accessed on July 12, 2025, https://www.daily-sun.com/bangla/post/15788
- বাংলাদেশে এআই: অবারিত ব্যবহার, নেই আইনি লাগাম; কতটা নিরাপদ আমরা?, accessed on July 12, 2025, https://www.jugantor.com/national/974648
- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক: ‘স্মার্ট জেনারেশন তৈরিতে এআই আইন গুরুত্বপূর্ণ’ – ভয়েস অফ আমেরিকা, accessed on July 12, 2025, https://www.voabangla.com/a/7556696.html
- এআই নীতি প্রণয়নে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার – banglanews24.com, accessed on July 12, 2025, https://www.banglanews24.com/national/news/bd/1308874.details
- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন – উইকিপিডিয়া, accessed on July 12, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6_%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97_%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3_%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%A8
- এআইAI-প্রযুক্তির-মাধ্যমে-দক্ষতা-উন্নয়ন-শীর্ষক-প্রকল্প-বিষয়ক-পরামর্শমূলক-সভা।, accessed on July 12, 2025, https://dyd.portal.gov.bd/site/notices/aaa91082-cbd9-4cef-987b-c8b603bc1315/%E0%A6%8F%E0%A6%86%E0%A6%87AI-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%9F%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A5%A4
- Aspire to Innovate (a2i) -Information & Communication Technology Division, accessed on July 12, 2025, https://a2i.portal.gov.bd/
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক লার্নিং ইভেন্ট, accessed on July 12, 2025, https://www.ittefaq.com.bd/680278/%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95
- AI to combat poverty: a2i and GiveDirectly join forces – The Daily Star, accessed on July 12, 2025, https://www.thedailystar.net/tech-startup/news/ai-combat-poverty-a2i-and-givedirectly-join-forces-3566101
- দেশে প্রথমবারের মতো ‘এআই লাইভ স্কিলিং প্রোগ্রাম’ চালু করলো মেটা – Jagonews24, accessed on July 12, 2025, https://www.jagonews24.com/technology/article/1032319
- মেটার ‘এআই লাইভ স্কিলিং প্রোগ্রাম’ বাংলাদেশে চালু – Premier News Syndicate Limited (PNS), accessed on July 12, 2025, https://www.pnsnews24.com/news/technology/354430
- ইউরোপে জেনারেটিভ এআই সহকারী চালু করছে মেটা | আন্তর্জাতিক | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), accessed on July 12, 2025, https://www.bssnews.net/bangla/international/186215
- চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে এআই ইমেজিং প্রযুক্তির উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছে অপো ও হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি, accessed on July 12, 2025, https://kalbelaexpress.com/%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A7%87/
- এআই ইমেজিং প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করেছে অপো ও এইচকে পলিইউ – আইসিটি নিউজ, accessed on July 12, 2025, https://www.dailyictnews.com/13567
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতিতে কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ, accessed on July 12, 2025, https://bangla.dhakatribune.com/technology/82526/%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ – UY LAB, accessed on July 12, 2025, https://uylab.org/blog/artificial-intelligence
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: সম্ভাবনা, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ – Daily Nayakantha, accessed on July 12, 2025, https://nayakantha.com/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87/
ভুল তথ্য?
এই গবেষণায় কোনো ভুল থাকলে অথবা আপনার কাছে কোনো নতুন তথ্য থাকলে, অনুগ্রহ করে আমার সাথে যোগাযোগ করুন।





Leave a comment