মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হলো ভয় পাওয়া। চায়ের টেবিল থেকে অফিসের মিটিং রুম, সবখানেই এক আলোচনা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে?

ভয় পাওয়াটা অমূলক নয়, তবে প্রশ্নটা ভুল।

সঠিক প্রশ্নটা হলো আপনি কীভাবে সেই মানুষ হবেন যাকে AI রিপ্লেস করতে পারবে না। ব্যাপারটা অনেকটা সেই পুরনো দিনের মতো। যারা কম্পিউটার শিখল তারা এগিয়ে গেল, আর যারা টাইপরাইটার আঁকড়ে ধরে রইল তারা হারিয়ে গেল।

লিংকডইনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে ২০২২ সালের শেষ থেকে পেশাদাররা তাদের প্রোফাইলে নতুন স্কিল যোগ করছেন ১৪০% দ্রুত গতিতে। Litecast নিশ্চিত করেছে যে AI স্কিল সম্পন্ন চাকরির পোস্টিংগুলো ২৮% বেশি বেতন দিচ্ছে। বছরে প্রায় ১৮,০০০ ডলার বাড়তি।

আজকের এই লেখায় গল্প কম, কাজের কথা বেশি। আসুন জেনে নিই এমন সাতটি দক্ষতার কথা যা আগামী এক দশকে আপনাকে শুধু টিকেই থাকতে সাহায্য করবে না, বরং বানিয়ে তুলবে অপরিহার্য।

১. সমস্যাকে চিহ্নিত করা

বেশিরভাগ মানুষ AI-এর সামনে বসে বলে এটা লিখে দাও বা ওটা ঠিক করে দাও। তারপর ফলাফল দেখে নাক সিটকায়। সমস্যাটা মেশিনের না, সমস্যা আপনার। আপনি নিজেই জানেন না আপনি আসলে কী চান।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অ্যানালিটিকাল থিংকিং বা সমস্যা বিশ্লেষণের ক্ষমতা হবে এক নম্বর দক্ষতা। স্ট্যানফোর্ড দেখেছে যে AI-প্রভাবিত ক্ষেত্রে তরুণ কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছে কারণ শুধু কাজ সম্পাদন করা যথেষ্ট নয়।

কোনো AI টুল খোলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন। আমি আসলে কী সমাধান করতে চাইছি? এই কাজটা কার জন্য? সফল হলে ফলাফলটা দেখতে কেমন হবে?

আপনার যদি নিজের ব্যবসা বা টিম থাকে, তবে আপনার ভিশন বা টোন অফ ভয়েস লিখে রাখুন। যেন AI সেটা পড়ে বুঝতে পারে আপনার স্টাইলটা কেমন।

এআই-এর যুগে ক্যারিয়ার বাঁচাবে এই ৭টি স্কিল, একটা ছাড়া আরেকটা কাজ করে না।
এআই-এর যুগে ক্যারিয়ার বাঁচাবে এই ৭টি স্কিল, একটা ছাড়া আরেকটা কাজ করে না।

২. সঠিক প্রশ্ন করার দক্ষতা

প্রম্পটিং এখন আর কোনো হ্যাক বা ট্রিকস নয়, এটা নতুন যুগের স্বাক্ষরতা। ভাবুন তো, আপনার অফিসে নতুন এক কর্মী জয়েন করেছে যে পৃথিবীর সব জানে, কিন্তু তাকে কাজটা বুঝিয়ে না দিলে সে কিছুই করতে পারে না। AI হলো সেই কর্মী।

লিংকডইন ২০২৫ সালে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দক্ষতা হিসেবে AI সাক্ষরতা এবং প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিংকে চিহ্নিত করেছে।

এক লাইনের নির্দেশ দেবেন না। AI-কে কনটেক্সট দিন। তাকে বলুন তুমি একজন দক্ষ কপিরাইটার হিসেবে এই লেখাটা লেখো অথবা একজন সিনিয়র লইয়ার হিসেবে এই চুক্তিপত্রটা দেখো। এভাবে রোল দিলে আউটপুটের মান অনেক ভালো হয়।

প্রম্পটিং শেখার বেশ কিছু টেকনিক আছে। জিরো-শট প্রম্পটিং মানে কোনো উদাহরণ ছাড়াই সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া। ফিউ-শট প্রম্পটিং মানে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে AI-কে প্যাটার্ন বোঝানো। চেইন-অফ-থট প্রম্পটিং মানে AI-কে ধাপে ধাপে চিন্তা করতে বলা যাতে জটিল সমস্যার সমাধান আসে।

আমার বই “প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিগিনার গাইড” এ এই প্রতিটি টেকনিক বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা আছে। প্রতিটি টেকনিকের জন্য উদাহরণ প্রম্পট এবং AI-এর আউটপুট দেওয়া আছে যা আপনি সরাসরি কপি করে ব্যবহার করতে পারবেন। অপেরা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত এই বইটি বাংলায় প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার সবচেয়ে সম্পূর্ণ গাইড।

৩. কাজের প্রবাহ সাজানো

একজন মানুষ এখন আর একা নয়। একজন দক্ষ মানুষ এখন একাই একটা ছোটখাটো টিমের সমান কাজ করতে পারেন, যদি তিনি জানেন কীভাবে ওয়ার্কফ্লো সাজাতে হয়।

সিলিকন ভ্যালির বড় বড় ফাউন্ডাররা এখন AI-কে কেবল চ্যাটবট হিসেবে দেখেন না। তারা AI-কে দেখেন বিভিন্ন রোল বা পদে। Instagram-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে Anthropic-এর CPO Mike Krieger বলেছেন যে তার এক বন্ধু Claude-কে তার প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে ব্যবহার করেন, Claude-কে তার আইনজীবী হিসেবে ব্যবহার করেন, এমনকি Claude-কে তার ফাউন্ডার থেরাপিস্ট হিসেবেও ব্যবহার করেন।

আপনিও এভাবে ভাবতে পারেন। Claude হতে পারে আপনার প্রোডাক্ট ম্যানেজার। ChatGPT হতে পারে আপনার রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট। GenSpark-এর মতো টুল দিয়ে ইমেইল লেখা, স্লাইড বানানো বা রিসার্চের কাজগুলো অটোমেট করে ফেলা যায়।

মূল কথা হলো এক একটা কাজ আলাদা করে না করে পুরো সিস্টেমটাকে অটোমেট করার চিন্তা করুন। এটাই ওয়ার্কফ্লো অর্কেস্ট্রেশন।

৪. যাচাই-বাছাইয়ের চোখ

এটা হতে যাচ্ছে এই দশকের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত কিন্তু জরুরি দক্ষতা। AI মাঝে মাঝে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে ভুল তথ্য দেয়। যাকে বলে হ্যালুসিনেশন।

একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর Blake Shaw-কে ইন্টারভিউ করার সময় AI থেকে একটি উদ্ধৃতি পড়েছিলেন যা AI Blake-এর বলে দাবি করেছিল। Blake তার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন আমি মনে করি না আমি এটা বলেছি। মনে রাখবেন, মেশিনের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, আপনার আছে।

তিনটি সহজ যাচাই অভ্যাস গড়ে তুলুন।

প্রথমত, ফ্যাক্ট চেক করুন। ChatGPT কোনো তথ্য দিলে Perplexity দিয়ে সেটা ক্রস-চেক করুন। যদি কোনো শক্ত সোর্স না থাকে, সেটা রেড ফ্ল্যাগ।

দ্বিতীয়ত, কনফিডেন্স লেভেল জিজ্ঞেস করুন। AI-কে বলুন এই তথ্যের ব্যাপারে তুমি কতটা নিশ্চিত, পার্সেন্টেজে বলো। আপনি অবাক হবেন দেখে যে AI কত ঘন ঘন নিজের দাবি ডাউনগ্রেড করে যখন আপনি জিজ্ঞেস করেন।

তৃতীয়ত, দ্বিতীয় মতামত নিন। এক মডেলের উত্তর অন্য মডেলকে দিয়ে যাচাই করান। চিকিৎসা বা আইনি বিষয়ে অন্ধের মতো মেশিনকে বিশ্বাস করবেন না, নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করুন।

Microsoft AI-এর CEO Mustafa Suleyman বলেছেন যে তাদের প্রায় ৪০% কোয়েরি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। তাই তারা Harvard Medical থেকে সাইটেশন দিয়ে উত্তরগুলো গ্রাউন্ড করেন। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন এটা কখনো কখনো ভুল করে। আপনি এখনও এর উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে পারেন না।

৫. সৃজনশীল চিন্তা

মেশিন হাজারটা ড্রাফট তৈরি করতে পারে, কিন্তু কোনটা ভালো বা কোনটা মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটবে সেটা মেশিন বোঝে না। এখানেই মানুষের জয়।

শূন্য পৃষ্ঠা বা ব্ল্যাঙ্ক পেজের দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ। AI আপনাকে শুরুটা করে দেবে, কিন্তু ফিনিশিং টাচটা হবে আপনার। মেশিন তথ্য জোড়া লাগাতে পারে, কিন্তু নতুন কোনো এঙ্গেল বা মানবিক স্পর্শ কেবল আপনিই দিতে পারেন।

Reid Hoffman বলেছেন হ্যাঁ, কয়েক বছরের মধ্যে সবকিছুর জন্য AI টুল থাকবে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে কীভাবে নিজের সৃজনশীলতা যোগ করতে হয়। AI যে এডিটিং করে সেটা সম্ভবত AI প্লাস একজন মানুষের মতো ভালো না।

ভয় না পেয়ে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে মেশিনের গতির সাথে জুড়ে দিন। World Economic Forum ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে আগামী ৫ বছরে সৃজনশীল চিন্তার চাহিদা বিশ্লেষণমূলক চিন্তার চেয়েও দ্রুত বাড়বে।

৬. এক থেকে অনেক

আগে বলা হতো এক ঢিলে দুই পাখি মারা। এখন যুগটা এমন যে এক ঢিলে দশ পাখি মারতে হবে।

অসীম কনটেন্টের জগতে যে ব্যক্তি একটি ভালো আইডিয়াকে অনেক ফরম্যাটে ছড়িয়ে দিতে পারে তার অন্যায্য সুবিধা আছে।

একটি ভিডিও বানালে সেটা থেকে ব্লগ লিখুন, সেটা থেকে ছোট ক্লিপ বা রিলস বানান, লিংকডইনের জন্য পোস্ট রেডি করুন। AI দিয়ে এই রিপারপাসিং করা এখন জলভাত। একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের টিম তিন মাসে ৯০ মিলিয়ন ভিউ জেনারেট করেছে এই পদ্ধতিতে। যে যত দ্রুত কনটেন্ট ছড়িয়ে দিতে পারবে, সে তত এগিয়ে থাকবে।

৭. আজীবন ছাত্র থাকা

সবশেষে যে দক্ষতাটি অন্য সব দক্ষতাকে সম্ভব করে তোলে তা হলো শেখার মানসিকতা। ২০ বছর পড়াশোনা করলাম, বাকি জীবন সেটা দিয়ে চাকরি করলাম এই দিন শেষ।

এখন আপনাকে আজীবন শিখতে হবে। যখন যে প্রযুক্তি আসবে তার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। আপনি ক্যারিয়ার বদলাতে স্বাধীন। আপনি ইন্ডাস্ট্রি বদলাতে স্বাধীন।

Microsoft AI-এর CEO Mustafa Suleyman বলেছেন শেখার মধ্যে একটু ঘর্ষণ বা কষ্ট থাকা ভালো। সবকিছু যদি AI খুব সহজে করে দেয়, তবে আমাদের ব্রেন অলস হয়ে যাবে। তাই কঠিন জিনিস শেখার অভ্যাসটা ধরে রাখতে হবে।

AI সবকিছু মসৃণ করে দিতে পারে, কিন্তু আপনি যদি কঠিন জিনিসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনি সেই পেশিটাই হারান যা আপনার সবচেয়ে বেশি দরকার।

শেষ কথা

২০৩০ সালের মধ্যে আজকের ৩৯% দক্ষতা অচল হয়ে যাবে। এটা যেমন ভয়ের, তেমনি অপার সম্ভাবনার।

প্রশ্ন এটা নয় যে AI আপনাকে রিপ্লেস করবে কি না। প্রশ্ন হলো আপনি কি সেই স্কিলগুলো শিখছেন যা আপনাকে রিপ্লেস করা অসম্ভব করে তুলবে?

শুরুটা আজই হোক। সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা সময় দিন নতুন কোনো টুল শেখার পেছনে। কৌতূহলী হোন। ভবিষ্যৎ তাদেরই যারা পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে জানে।

আর যদি প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং গভীরভাবে শিখতে চান, তাহলে আমার বই “প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিগিনার গাইড” পড়ুন। অপেরা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত। জিরো-শট থেকে শুরু করে চেইন-অফ-থট পর্যন্ত প্রতিটি টেকনিক বাংলায় ব্যাখ্যা করা আছে। প্র্যাক্টিকাল প্রম্পট টেমপ্লেট আছে যা আপনি সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস প্যাকেজ গাইড আছে। মূল্য নির্ধারণ কৌশল আছে। এই লেখায় যা শিখলেন তার দশগুণ বিস্তারিত বইয়ে পাবেন।


I’m Enamul Haque, Director of ServiceNow Strategic Solutions and Architecture at Wipro. I’ve been working with ServiceNow for 14 years, starting from the Aspen release, and I’ve watched the platform evolve from basic ticketing to the AI powered ecosystem it is today.

Beyond my day job, I’m a technology author, educator, and adjunct professor at Bangladesh Maritime University, where I teach AI and Data Science at the Faculty of Ocean and Earth Sciences. I’m passionate about bridging the gap between AI potential and practical application.

This GitBook brings together everything I’ve learned about making generative AI work in enterprise environments. I hope it helps you on your Now Assist journey.

Connect with me on LinkedIn or through my YouTube channel, Digital Deep Dive.


Leave a comment

Trending